ক্রিকেট হোক বা ফুটবল- খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে হাত ধরে মাঠে নামে শিশুরা। জাতীয় সংগীতের সময় খেলোয়াড়দের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গাইতে দেখা যায় শিশুদের। কিন্তু কেন এমনটা করা হয়, এই শিশুদের কী বলা হয়?
জাতীয় সংগীতের সময় যে শিশুরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে থাকে, তাদের বলা হয় এসকট অথবা ম্যাসকট চিলড্রেন।
খেলোয়াড়দের সঙ্গে শিশুদের দাঁড়ানোর প্রচলন খুব বেশিদিন আগের নয়। এটি শুরু হয় গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শেষদিকে। সর্বপ্রথম শিশুরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে প্রবেশ করে চমক সৃষ্টি করে ১৯৯৯ সালের এফএ কাপ ফাইনালে। পরের বছর ২০০০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম প্রতি খেলোয়াড়ের সঙ্গে একজন করে শিশু মাঠে প্রবেশ করে।
২০০১ সালে ‘শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন প্রচারণা শুরু করে ইউনিসেফ। সংস্থাটির সেই প্রচারণার অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ২০০০ সালের ইউরো শেষ হওয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা দেয় তারা।
২০০১ সাল থেকে এই নিয়ম চালু হলেও এর বাস্তবায়ন ঘটে ২০০২ সালে। জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ায় যৌথভাবে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপ ফুটবলে নতুন চমক আনতে প্রতি ম্যাচেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে ইউনিসেফের দেওয়া ‘শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন’ লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরে মাঠে নামে ছোট শিশুরা।ইউনিসেফের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল, বিশ্বব্যাপী সব শিশুর জীবন ব্যবস্থাকে আরও বেশি সুরক্ষিত ও উন্নত করা।
ম্যাসকট জনপ্রিয় হওয়ার কারণ আছে অনেক। প্রিয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছোট শিশুদের নিষ্পাপ মুখ খেলার আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শিশুরা বিভিন্ন এনজিও এবং অনাথ আশ্রম থেকে আসে। যারা অনাথ, দরিদ্র অথবা নানা সুবিধাবঞ্চিত। এইভাবে ওই সংস্থাগুলোর অর্থ সংস্থান হয়। একই সঙ্গে শিশুরাও প্রিয় তারকাদের সান্নিধ্যে এসে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন এবং অনুপ্রেরণা পান। পাশাপাশি জমকালো অনুষ্ঠান দেখারও সুযোগ হয় তাদের।
তাছাড়া শিশুদের মন স্বচ্ছ হয়। কোনো হিংসা-বিভেদ তাদের মনের ভেতর থাকে না। সহজেই যে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিতে পারে। খেলোয়াড়দেরও শান্তির বার্তা দিতে, স্বচ্ছভাবে ক্রিকেট খেলতে এবং প্রতিপক্ষকে বন্ধু মনে করার লক্ষ্যে শিশুদের রাখা হয় বলে অনেকের ধারণা। খেলার মাঠে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে, তা বোঝানোর জন্যই জাতীয় সংগীতের সময় শিশুদের সঙ্গে করে আনা হয়।
কেবল শিশুরাই যে ম্যাসকট হবে, তেমনটা কিন্তু নয়। ২০১৫ সালের মা দিবসে নেদারল্যান্ডসের ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডামের খেলোয়াড়রা তাদের মায়ের হাত ধরে মাঠে নেমেছিলেন। অন্যদিকে, ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর খেলোয়াড়রা সেই বছরই কুকুরের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে কুকুর নিয়ে মাঠে নামেন।
২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের আরেক ক্লাব আরকেসি ওয়ালওয়াইক ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষ্যে ম্যাসকট হিসেবে বেছে নিয়েছিল মডেলদের।
ডিবিসি/আরপিকে