রমজান আসলেই প্রত্যেক বাড়িতে ভাঁজা পোঁড়া খাবারের তালিকায় ছোলা থাকবেই। তবে এই ছোলা যে শুধু রমজান মাসেই খাওয়া যায়, তা কিন্তু নয়। যারা একটু স্বাস্থ্য সচেতন আছেন বা ডায়েটে আছেন, তারা কিন্তু এই ছোলাকে সারা বছরই খাদ্য তালিকায় রাখেন।
উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে ছোলা। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায়। আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাই শুধু রমজান মাস নয়, ১২ মাসেই ছোলা হোক আপনার সঙ্গী।
রান্না ছোলায় যত কম তেল, মসলা দেওয়া যায়, ততই ভালো। ছোলা কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। ভিনেগারে সারা রাত ছোলা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কৃমি মারা যায়।
চলুন জেনে নেই আরও কিছু উপকারিতা-
১. ডায়াবেটিসে উপকারী:
১০০ গ্রাম ছোলায় আছে ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে।
২. যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে:
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় ও ছোলার শাকে। ডায়াটারি ফাইবার খাবারে অবস্থিত পাতলা আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়, যে সকল অল্পবয়সী নারী বেশি পরিমাণে ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খান, তাদের হাইপারটেনশনের প্রবণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
৪. মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে:
এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আর কাঁচা ছোলার ক্ষমতা রান্না ছোলার চেয়েও অনেক গুণ বেশি। কারণ, পানিতে ভেজানো ছোলায় ভিটামিন-বি-এর পরিমাণ থাকে বেশি। ভিটামিন ‘বি’ মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়। বেরিবেরি রোগ, মস্তিষ্কের গোলযোগ, হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাছাড়া ছোলায় রয়েছে জ্বর ভালো করার ক্ষমতা।
৫.ক্যান্সার রোধে:
কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন, বেশি পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক অ্যাসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তাই নিয়মিত ছোলা খান এবং সুস্থ থাকুন। এছাড়া ছোলায় ভিটামিন- সি’ও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ঝাল, তেল, মসলা দিয়ে রান্না করা ছোলার চেয়ে কাঁচা ছোলার পুষ্টি বেশি।
সতর্কতা:
যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা ছোলা একেবারেই খাবেন না। তবে অনেককেই দেখা যায় ছোলা না ভিজিয়ে দ্রুত সিদ্ধ করে খেতে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মনে রাখবেন, ছোলাকে অবশ্যই সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। অথবা সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ৬ঘণ্টা ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করে ছোলার বাহ্যিক কেমিক্যাল এবং ফাইটিংসগুলো চলে যাবে।