টেকনাফে ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ীর বেশিরভাগই জামিনে মুক্ত হয়ে পুরোনো পেশায় ফিরে এসেছেন। অনেকে সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপনে থেকে সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। পুলিশ তাদের শনাক্ত করে ৩০২ জনের একটি নতুন তালিকা তৈরি করেছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে।
এর অন্যতম উদাহরণ হ্নীলা ইউনিয়নের শাহ আজম। তিনি আত্মসমর্পণ করার পর দুই বছর কারাগারে ছিলেন। মুক্তি পেয়ে ২০২১ সালের ২৩শে মে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ পুনরায় গ্রেপ্তার হন। তার বাবা ইউপি সদস্য জামাল হোসেনও ছেলের সাথে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং তিনিও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে, গত ২৬শে জুন র্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ শফিউল্লাহ ও নুরুল বাশার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে শফিউল্লাহ ছিলেন আত্মসমর্পণকারী।
২০১৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে টেকনাফে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা ও ৩০টি অস্ত্রসহ ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। এই তালিকায় সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির চার ভাই, ভাগ্নে, চাচাতো ভাইসহ প্রভাবশালী অনেকেই ছিলেন। তারা মাদক ব্যবসায় আর না ফেরার শপথ নিলেও স্থানীয়দের অনেকেই এই আত্মসমর্পণকে "সাজানো নাটক" হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পরবর্তীতে, ওই ১০২ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ২০২২ সালে আদালত প্রত্যেককে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রায়ের দিন ৮৪ জন আসামিই আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং তারা আত্মগোপনে চলে যান।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এক প্রতিবেদনেও টেকনাফের মাদক কারবারিদের পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় এক নম্বরে নাম থাকলেও আব্দুর রহমান বদি সে সময় আত্মসমর্পণ করেননি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীন জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন এবং শপথ ভঙ্গ করে পুনরায় এ ব্যবসায় জড়ালে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
একই সঙ্গে ৩৪ বিজিবি, কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম জানান, সীমান্ত দিয়ে মাদক ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতার পরেও টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ইয়াবার চালান ঢুকছে এবং রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে স্থানীয় অনেকেই এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
ডিবিসি/এএনটি