ছোট বড় প্রায় সবার কাছেই চুইংগাম একটি অতি পরিচিত খাবার। প্রতিটি মুদির দোকানে নানা স্বাদের, নানা রঙের, নানা আকারের চুইংগাম পাওয়া যায়। তবে কিভাবে শুরু এর যাত্রা? চলুন জেনে নেওয়া যাক!
সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে চুইংগাম দারুণ এক খাদ্য ইউরোপে বা আধুনিক দেশগুলোতে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই চুইং গাম চিবানো হতো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে নয় হাজার বছর আগে উত্তর ইউরোপের অধিবাসীরা একধরনের গাছের ছাল চিবোতেন।
সম্ভাব্য দুটি কারণে সেই সময় তারা গাছের ছাল চিবাতেন বলে ধারণা করে থাকেন গবেষকরা। । একটি হচ্ছে সেটি চিবানোর ফলে একটি আলাদা স্বাদ পাওয়া যেত। আরেকটি হচ্ছে দাঁতের ব্যথা সারানোর জন্য তারা সেই গাছের ছালটি চিবিয়ে থাকতেন। আমেরিকা মহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসেও চুইংগাম চাবানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সময়ে স্যাপোডিল্লা গাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে জমে যাওয়া রস চিবানো হতো। সাধারণত ক্ষুধা মেটাতে কিংবা তৃষ্ণা নিবারণ করতেই এমনটা করতো মায়ান নামক এক জাতি। এরপর মেক্সিকোর বিখ্যাত আজটেক সভ্যতায়ও একইভাবে স্যাপোডিল্লা গাছ থেকে উৎপন্ন চুইংগাম খাওয়া হতো।
যদিও চুইংগাম চাবানোর ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নিয়ম নেই। তবে আজটেক সভ্যতায় চুইংগাম চাবানোর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হত। শুধুমাত্র শিশু ও অবিবাহিত নারীরা প্রকাশ্যেই চুইংগাম চিবোতে পারতেন। অন্যদিকে, বিবাহিত নারী এবং বিধবাদের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল ব্যক্তিগত পরিসরে চুইংগাম চাবানোর। সাধারণত মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে তারা চুইংগাম চাবাতেন। পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে একেবারে আড়ালে চুইংগাম চিবোনোর কঠোর নিয়ম ছিল এবং উদ্দেশ্য ছিল দাঁত পরিষ্কার করা।
সর্বপ্রথম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে জন কার্টিস নামের একজন ব্যক্তি চুয়িং গাম শিল্পের সূচনা করেন ১৮৪০ সালের দিকে। নিউ ইয়র্কের থমাস অ্যাডামস নামের একজন ব্যক্তির নির্বাসিত প্রেসিডেন্টের কাছে থাকা স্যাপোডিল্লা গাছের নির্যাস থেকে উৎপাদিত চুইংগাম ‘চিকল’, থমাস অ্যাডামসের নজরে আসে। ১৮৮০ সালের দিকে তিনি একটি কোম্পানি তৈরি করেন, যেটি পুরো আমেরিকায় ‘চিকল’ থেকে তৈরিকৃত চুইংগাম সরবরাহ করা হত।
বিশ শতকের দিকে বড় হতে থাকে চুইংগামের বাজার। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় উইলিয়াম রিংলে জুনিয়র নামের একজন ব্যক্তি সাবানের বিপণন করতেন। তিনি তার পণ্য বিপণনের জন্য বিক্রেতাদের বিভিন্ন বাড়তি সুবিধা দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে বাজারে চুইংগামের বিশাল চাহিদা তৈরি হয়। ১৮৯৩ সালের দিকে তিনি চুইংগাম তৈরির দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। চুইংগামের বিজ্ঞাপনের ব্যয় করেছিলেন বিপুল অর্থ যেটি তাকে আমেরিকার অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে।
১৯২৮ সালে ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ারের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী ওয়াল্টার ডাইমার একধরণের উন্নত বাবল গাম তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেন। ওয়াল্টার ডাইমারের উদ্ভাবিত কৌশলের বাবল গামের নাম দেয়া হয় ‘ডাবল বাবল’। এই বাবল গাম বাজারে বেশ আলোড়ন তুলে। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্বাদের ও বর্ণের চুয়িং গাম তৈরি করে চলছে।
সূত্র: স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগাজিন