জেলার সংবাদ, অপরাধ, কৃষি

জেলেদের হাতে চায়না জাল, মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী

আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২৫শে জুন ২০২১ ০৮:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না জালের ফাঁদে দেশিয় প্রজাতির মাছ। সহজে বেশি বেশি মাছ ধরা পড়ায় নদ-নদী জুড়ে জেলেরা ব্যবহার করতে শুরু করেছে এই চায়না জাল।

নদ-নদীতে থাকা মিঠা পানির সব ধরনের দেশি মাছ সূক্ষ এই চায়না জালে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির এই প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কই, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, পাবনার বেড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে আধুনিক চায়না জালের কারখানা রয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাছপট্টি ও শৈলকুপা উপজেলার হাইস্কুল রোডে এর কয়েকজন ডিলার রয়েছে।

নদীপাড়ের বাসিন্দা ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক পিস চায়না জালের দাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সাধারণত ৫২ হাত লম্বা হয়ে থাকে এ জাল, লোহার ৪টি শিক দিয়ে খোঁপ-খোঁপ আকারে থাকে। সূক্ষ ঘন চায়না জালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদীতে মাটির সাথে লম্বা-লম্বিভাবে লেগে থাকে এবং দু'দিক থেকে মাছ ঢুকতে পারে। চায়না জালের এ ফাঁদে মাছ ধরতে মাছের কোন খাবার বা টোপ দিতে লাগে না। ফলে চিরায়িত মাছ ধরার যেসব কৌশল দিয়ে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে।

দেখা গেছে, জেলেদের চেয়ে এই চায়না জালের সহজ ফাঁদে মাছ ধরতে নেমেছে মৌসুমী শিকারী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কুমার নদে এই চায়না জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। কয়েকশ' গজ দূরে দূরে চায়না জাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে নিয়েছে কুমার নদের পাড়ে। ডিঙি নৌকা নিয়ে প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হয়ে যায় এই জাল পাতার প্রক্রিয়া। সারা রাত পেতে রাখার পর সকাল থেকে চলে জাল গোছানোর পালা। জালে ধরা পড়ে একে একে দেশি প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় সব মাছ। শুধু মাছই নয় নদীতে থাকা কোন জলজ প্রাণিও রক্ষা পাচ্ছে না। এমনকি মাছের ডিমও ছেঁকে ওঠে এই চায়না জাল থেকে।

শৈলকুপা উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়কার খরস্রোতা কুমার নদটি এমনিতেই পানির অভাবে মৃত প্রায়, হয়ে পড়েছে মাছশূণ্য। এখন বর্ষা মৌসুমে নদে চরাঞ্চলে যখন কিছুটা পানির দেখা মিলেছে এর ভেতরে এই চায়না জালের ব্যবহারে কোন ধরনের মাছের বংশ থাকছে না পানিতে। চায়না জালে মাছ ধরার মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণির মৌসুমী মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গাড়াগঞ্জ থেকে শুরু করে একই উপজেলার আবাইপুর গ্রাম পর্যন্ত ২৫ কি.মি. নদের জায়গা জুড়ে নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

মাছ শিকার করতে আসা গোবিন্দপুর গ্রামের আসলাম বলেন, এই জাল সারারাত নদীতে পেতে রাখি, সকাল হলেই জাল তুলে ফেলি, জালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পেয়ে থাকি। এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করা ঠিক না, জেনেও কিছু মাছ পাওয়ার আশায় এ কাজ করে থাকি।

ঝাউদিয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী নিমাই বলেন, এভাবে মাছ শিকার করা ঠিক না  এভাবে কারেন্ট চায়না জাল দিয়ে মাছ মারলে, কিছুদিন পর নদীতে আর কোন মাছ পাওয়া যাবে না।

নদীপাড়ের বাসিন্দা বিজুলিয়া গ্রামের কিবরিয়া মোল্লা বলেন, কিছুদিন পরে মিঠা পানির এসব মাছ আর মিলবে না ভয়ঙ্কর চায়না জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার একটা বেআইনি কাজ, খুব তাড়াতাড়ি কুমার নদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নদ-নদীতে এভাবে অবৈধ চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করা ঠিক না উল্লেখ করে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অবশ্যই এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কোনভাবেই নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন