বাংলাদেশ, রাজধানী

জেলে সম্প্রদায়ের নারী অধিকার বাস্তবায়নে সরকারি নীতিমালা সংস্কার বিষয়ক সংলাপ

ডেস্ক ‍নিউজ

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ ০৫:০৩:০৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

পুরুষদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারীরাও মাছ ধরা পেশার সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে নারী জেলেরা প্রতিনিয়ত সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকেন। এ বিষয়ে নারী মৎস্যজীবীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারি নীতিমালা সংস্কার বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২৮শে এপ্রিল), ঢাকার বনানীস্থ হোটেল ওমনি রেসিডেন্সিতে অনুষ্ঠিত হয় নারী মৎস্যজীবীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারি নীতিমালা সংস্কার বিষয়ক সংলাপ। 

 

অক্সফাম বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহ-অর্থায়নে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) 'এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টরস ইন বাংলাদেশ (ই ডব্লিউ সি এস এ)' প্রকল্পের কার্যক্রম হিসাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

 

সংলাপে থেকে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট এনজিও, নারী মৎস্যজীবী, মৎস্যজীবী সমিতি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে হারমোনি ট্রাস্ট এর সিইও অমিতাভ ভট্টাচার্য মৎস্যজীবীদের বর্তমান অবস্থা, সঙ্কট এবং সেসব থেকে উত্তরণের জন্য সরকারী নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করেন। এরপর বিভিন্ন সংস্থা থেকে উপস্থিত প্রতিনিধিগণ অংশ নেন উন্মুক্ত আলোচনায়, বিশেষ করে চাঁদপুর থেকে আগত নারী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিগণ জানান তাদের ভোগান্তির কথা।

 

 

সংলাপে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে, জেলে সম্প্রদায়ের নারীদের 'জেলে কার্ড' পাওয়ার প্রসঙ্গ। পেশাজীবী হিসাবে মৎস্যজীবীদের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশেষ পরিচয়পত্র বা 'জেলে কার্ড' প্রদান করে থাকে, যার মাধ্যমে তারা সরকারী সুযোগ সুবিধা ও ভর্তুকি পেয়ে থাকেন। সীমিত আকারে শুরু হলেও নারী মৎস্যজীবীদের বৃহদাংশই এখনো জেলে কার্ড পাননি। তাই সরকারি কোনো ভর্তুকি বা সুবিধা তারা পান না। এছাড়াও মাছ ধরা নিষিদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিয়ম মেনে বড়শি বা মুইজাল দিয়ে মাছ ধরলেও অনেক সময়ই নানারকম প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মাছ ধরেই যাদের জীবন চলে, ভর্তুকির অভাবে তাদের জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তা।

 

আলোচনার বিষয়বস্তু আমলে নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ তাদের মতামত ও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন। মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'নারী মৎস্যজীবীদের সরকারি স্বীকৃতির জন্য নীতিমালায় মৎস্যজীবীর সংজ্ঞা পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশের নদী, জলাশয় ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের জন্য লিজ ব্যবস্থাপনা নীতিরও সংস্কার করতে হবে। বর্তমানে জাতীয় মৎস্য নীতি, ১৯৯৮ এর সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে।'

 

মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ শাখার উপপরিচালক বরুন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলে সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই জেলে কার্ড প্রদানের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ বেদে বা নৌকাবাসি সম্প্রদায়ের যাদের জাতীয় পরিচয় নেই কিন্তু পেশাগতভাবে জেলে, তাদের কথা বিবেচনায় রেখে এই জেলে কার্ড প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ এর সংস্কারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থার উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে।

 

মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাগণও তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। তারা জানান, পেশাজীবী হিসাবে নারী ও পুরুষ জেলেদের সমান অধিকার বাস্তবায়ন, মৎস্যজীবী সমিতিগুলোতে নারীদের স্বীকৃত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, এলাকা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকারভেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন এবং সর্বোপরি জেলে সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে কাজ করছে। ই ডব্লিউ সি এস এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের তারা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এই সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে জেলে সম্প্রদায়ের নারীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবমুখী সমাধানের রূপরেখা প্রণয়ন করতে পারে। জেলে সম্প্রদায়, বিশেষ করে তাদের নারীরা, সমাজের এক অবহেলিত অংশ। মে দিবসে এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর সাথে ই ডব্লিউ সি এস এ প্রকল্পের সাথে সংশিষ্ট সবাই সংহতি জানিয়ে, তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বিভিন্নরকম কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যাতে এই সম্প্রদায়ের নারীরা নিরাপদ, সম্মানজনক এবং স্বাবলম্বী জীবনযাপন করতে পারেন।

 

ডিবিসি/ নাসিফ

আরও পড়ুন