লম্বা ক্যানেল, কোথাও নেই পানি। তবুও ক্যানেলের ভেতরে ও বাইরে গাদা করে এবং জাগ আকারে রেখে দেওয়া হয়েছে পাট। কৃষকের আশা বৃষ্টি হলে পানি জমবে আর তখন জাগ দেওয়ার পর পাটের যে অংশটুকু ভালো থাকবে সেটি ঘরে উঠবে। চিত্রটি ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার দরিবিন্নি গ্রামের ক্যানেলের। এই ক্যানেলেরই কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে পানি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদরের খাজুরা, গোপালপুর, শৈলকুপার কচুয়া, মলমলি, হরিনাকুন্ডু উপজেলার দরিবিন্নি, কালীগঞ্জের বুজিডাঙ্গা, বহিরগাছীসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা পানির অভাবে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষেতের পাট নিয়ে। নদী, ক্যানেল, ডোবা, পুকুরসহ অধিকাংশ জলাশয়ে নেই পানি।
যে জায়গাগুলোতে অল্প পানি আছে, সেখানেই পাট কাটার পর একে একে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও ডোবা, ক্যানেলে গর্ত তৈরি করে ইঞ্জিন চালিত মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে পানি ধরে রেখে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টাও করছেন কৃষকরা। কোথাও পানির অভাবে ক্ষেতেই ফেলে শুকাচ্ছেন পাট, কোথাও আবার ক্যানেলের ধারে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। একই জায়গা গাদাগাদি করে জাগ দেওয়াতেও পানি পঁচে নষ্ট হচ্ছে পাটের মান। সেখানেও ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়ছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ২২ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যেই কর্তন সম্পন্ন হয়েছে ২০ হাজার ৪ শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষক থেকে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাট চাষে খরচ গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্যার, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, পানি সংকটসহ অন্যান্য কারণে খরচের বোঝা বাড়ছেই। ২০ থেকে ২২ হাজার টাকাতেও শেষ হচ্ছে না পাট ঘরে তোলার কাজ।
চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়াসহ পোকার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি পাটের। ফলে ফলন কমে দাঁড়িয়েছে বিঘায় গড়ে ৮ থেকে ১২ মন। চার হাজার টাকা বিঘায় পাট কাটতে খরচ, সেই পাট টানতে খরচ হচ্ছে আঁটিতে ৫ টাকা। সব মিলিয়ে এক আঁটি পাট শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত ব্যয় ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এমন অবস্থায় বাজারেও মিলছে না পাটের দাম। বর্তমানে প্রতি মণ পাট মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪ শ’ থেকে ১ হাজার ৮ শ’ টাকা দরে। মান খুবই ভালো হলে এর থেকে কিছুটা বেশি দাম মিলছে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলার রাধানগর গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, ‘ক্যানেলে পানি নেই। তবুও শুকনায় জাগ দিয়ে বসে আছি যদি পানি হয় তখন পাটগুলো জাগ হবে আর সেটি ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ঘরে তুলতে পারব। শত শত মণ পাট এভাবে পড়ে আছে পানির অভাবে।’
ঝিনাইদহ সদরের খাজুরা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খাল, পুকুর, নদী কোথাও পানি নেই। নবগঙ্গা নদীর খাজুরার এই জায়গার কোথাও এক হাত, কোথাও দেড় হাত পানি। এরই মধ্যে জাগ দিতে হচ্ছে। পাট পানিতেও ডুবছে না, অনেক সময় কাদার উপরেই থাছে। এতে পাটের কালার কালো হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ যদি বৃষ্টি দেয় তাহলে হয়তো শেষ মুহূর্তে আমরা কিছুটা রক্ষা পাব।’
অপর কৃষক বিপু মুন্সী জানান, এবার ফলন কম, তার উপর পাটের বাজার দামও কম। সব মিলিয়ে লোকসানের হারটাই বেশি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী জানান, পাট কর্তনের পর কৃষকের কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে জাগ দেওয়া স্থান সংকট।
এর কারণ এবছর বৃষ্টিপাত কম, পানিও জমেনি জলাশয়গুলোতে। এমন অবস্থায় কৃষকদেরকে তাদের নিজস্ব ও স্থানীয় ডোবা, পুকুর বা যেকোনো জলাশয়ে মোটর, ইঞ্জিন চালিত মেশিন কিংবা টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি জমিয়ে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে তিন ফিট গর্ত করে সেখানে পলিথিন বিছিয়ে সেখানেও পাট জাগ দেওয়া যেতে পারে।
ডিবিসি/আরপিকে