ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যেই রাজধানীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাবাহিত আরেক রোগ চিকুনগুনিয়া। এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগে আক্রান্তরা জ্বরের সঙ্গে গিঁটে গিঁটে তীব্র ব্যথায় ভুগে থাকেন, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত্যুঝুঁকি কম থাকলেও চিকুনগুনিয়ার ব্যথা রোগীদের ভোগাতে পারে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) শুধু ঢাকাতেই ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ভাইরাসটির দ্রুত বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একটি জরুরি সতর্কতা জারি করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে বহু রোগী আসছেন চিকিৎসার জন্য। এমনই একজন খিলক্ষেতের বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল জলিল। কয়েকদিন ধরে তীব্র জ্বর ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকায় স্বজনরা তাকে প্রথমে ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য তাকে আইসিডিডিআরবি'তে নিয়ে যাওয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী না হলেও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হতে পারে। পপুলার মেডিকেল ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ নূর বলেন, একই সঙ্গে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত থাকলে চিকুনগুনিয়া রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তিনি বয়স্ক, গর্ভবতী এবং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, আক্রান্তদের ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে রোগী ব্যবস্থাপনার কারণে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের মতে, এই রোগগুলো সেরে গেলেও শরীরের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থেকে যায়, যা রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
ডিবিসি/এনএসএফ