মাস তিনেক আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে তুলে ধরত প্রতিবেশী ভারত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা সেখানে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জট লেগে যায়। এ জট খোলার চেষ্টার সূচনা হিসেবে সম্প্রতি সংক্ষিপ্ত আলাপ হয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। এরপর এবার ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তার সফরটি হতে পারে। এখন সফরের দিনক্ষণ ঠিক করা নিয়ে দুই পক্ষে কথা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে দুই দেশের বার্ষিক পরামর্শমূলক বৈঠকে (ফরেন অফিস কনসালটেন্স-এফওসি) যোগ দিতে বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরটি অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার হলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চলমান অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে তার সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
অভিন্ন নদী গঙ্গার পানি ভাগাভাগির চুক্তি নবায়নের প্রস্তুতি পর্যালোচনা, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার ও দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করা, তাকে দেশে বিচারের জন্য ফেরানো, সীমান্তে বিএসএফ দ্বারা বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা বন্ধে দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রপ্তানির নানা বাধা সরানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দিতে পারে, এমনটি মনে করছেন তারা।
১৯৯৬ সালে সই হওয়া অভিন্ন নদী গঙ্গার ৩০ বছরের পানি ভাগাভাগি চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে।
এফওসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। এতে স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, পানিসম্পদ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দিয়ে থাকেন।
শেখ হাসিনা গত ৫ই আগস্ট পদত্যাগের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুই শতাধিক মামলা করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের সম্পর্কের অস্বস্তির মধ্যেও উভয় পক্ষ নিয়মিত বিষয়গুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে যৌথ নদী কমিশন, কাস্টমস ও ভারতের মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমানা আছে, সেসব বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ বার্ষিক এফওসি অনুষ্ঠিত হয় দিল্লিতে, গত বছরের ২৪শে নভেম্বর।
ডিবিসি/ এইচএপি