দীর্ঘ তিন বছরের বিরতি শেষে ঢাকা-বরিশাল রুটে আবারও যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) মালিকানাধীন শতবর্ষী স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’। তবে ঐতিহ্যের এই যাত্রায় যাত্রীদের সাড়া ছিল খুবই কম।
শুক্রবার (২৮শে নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে মাত্র ২০ জন যাত্রী নিয়ে স্টিমারটি বরিশাল নৌবন্দরে নোঙর করে।
এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে স্টিমারটি। টানা সাড়ে ১০ ঘণ্টার যাত্রা শেষে এটি গন্তব্যে পৌঁছায়। এর মধ্য দিয়ে এই নৌরুটে আবারও বিআইডব্লিউটিসি তাদের কার্যক্রম শুরু করল।
বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক খন্দকার তানভীর হোসেন জানান, ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর সময় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি মিলিয়ে মোট ৪১ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ২১ জন যাত্রী চাঁদপুরে নেমে যান। অবশিষ্ট ২০ জন যাত্রীকে নিয়ে স্টিমারটি বরিশালে পৌঁছায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রথম যাত্রায় জাহাজটিতে তৃতীয় শ্রেণির (চেয়ার) কোনো যাত্রী ছিলেন না।
বরিশাল নৌবন্দরে স্টিমারটি পৌঁছালে যাত্রীদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আহসান হাবিব ও জেলা প্রশাসক খায়রুল ইসলাম সুমন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, স্টিমারের প্রথম শ্রেণির এসি কামরার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকা এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নন-এসি কামরার ভাড়া ৩ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির (চেয়ার) ভাড়া ৬০০ টাকা।
অন্যদিকে, একই রুটে চলাচলকারী বেসরকারি বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ভাড়া যেখানে ২ হাজার টাকা এবং ডেকের ভাড়া যেখানে সর্বসাকুল্যে ৪০০-৫০০ টাকা (চেয়ার ৭০০ টাকা), সেখানে স্টিমারের এই ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যাত্রীদের আশঙ্কা, ভাড়ার এই বড় ব্যবধানের কারণে বিআইডব্লিউটিসি তাদের কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন থেকে প্রতি শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে এবং শনিবার সকালে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে স্টিমারটি ছেড়ে যাবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ঢাকার আশপাশে পর্যটন বাণিজ্যের জন্য এটি ভাড়া দেওয়া হবে।
১৯২৩ সালে কলকাতায় নির্মিত এই প্যাডেল স্টিমারটি ‘পিএস মাহসুদ’ নামে পরিচিত। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটের কারণে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের উদ্যোগে স্টিমারটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্টিমারটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ণ রেখেই অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় আধুনিকতা আনা হয়েছে। এর আগে গত ২১শে নভেম্বর স্টিমারটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় সেই যাত্রা বাতিল করা হয়েছিল।
ডিবিসি/এসএফএল