সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার মতপার্থক্য নেই এবং ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে গণভোটের প্রয়োজন হবে—এই মর্মে দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
মঙ্গলবার (১৫ই জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের চতুর্দশ দিনের আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম মত ভিন্নতা নেই বলে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনে গণভোটের কথা বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, সে বিষয়েও একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে কমিশন আশাবাদী।
আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থায় যদি উচ্চকক্ষ গঠন না হয় অথবা এটি গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংবিধানের সাধারণ কোনো সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনই যথেষ্ট হবে। তবে, সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮ (রাষ্ট্রপতি), ৫৬ (প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা), এবং ১৪২ (সংবিধান সংশোধন) এর মতো কিছু সুনির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোট বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এর সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) এবং ৫৮(ঙ) পুনরায় যুক্ত হলে সেগুলোর পরিবর্তনেও গণভোটের প্রয়োজন হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনাতেও এই মত উঠে এসেছিল। তবে, উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিছু দল ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, আবার কেউ কেউ আসনের সংখ্যানুপাতে এটি গঠনের কথা বলেছে।
যেহেতু একাধিকবার আলোচনার পরেও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, তাই তারা এর ভার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর অর্পণ করেছে। কমিশন এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চালিয়ে আগামী সপ্তাহে একটি সমাধানে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যদের মধ্যে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
ডিবিসি/এএমটি