সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তির সংবাদের মোড়কে মানবিক গল্প বলেন রাহিতুল ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ২৫শে অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৪৮:৫১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে চারপাশের জীবনের গল্পগুলো। তবু এই সময়ে এসেও তরুণ পাঠকেরাও নিজেদের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি খুঁজে বেড়ান। কেউ কেউ খোঁজেন সিনেমায়, কেউ খোঁজেন নাটকে, আর কেউ সাহিত্যে। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে ঠিক এই সময়ের গল্পগুলোই বলে যাচ্ছেন লেখক ও সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম। তিনি শুধু গতানুগতিক গল্প বলেন না, বলেন সেই সব অদেখা ভুবনের মানুষের গল্প, যাদের কথা আগে কেউ বলেনি। সেই গল্প নিয়মিত প্রকাশিত হয় পত্রিকার পাতায়, অনলাইনে, বইয়ে অথবা নাটকে। এতগুলো মাধ্যমে গল্প বলতে পারার কারণেই তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন তাদের নিজেদের ‘গল্পের নায়ক’।

অদেখা ভুবনের রূপকার

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন অনেক ক্ষেত্র আছে, যা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে আমাদের দৃষ্টি ঠিকমতো পৌঁছাত না। পুরো ক্ষেত্রটি ছিল যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। রাহিতুল ইসলাম সেই অন্ধকার কোণগুলোতেই সাহসিকতার সাথে আলো ফেলছেন—হোক সেটা প্রযুক্তি, উদ্যোক্তা, সংস্কৃতি বা প্রান্তিক কোনো জনগোষ্ঠীর বদলে যাওয়া জীবন। যেখানে অন্যরা কলম ধরতে দ্বিধা করেন, রাহিতুল ইসলাম সেখান থেকেই তুলে আনেন তার গল্পের পটভূমি।

রাহিতুলের উপন্যাসে নায়ক–নায়িকার মতোই আইসিটি শিল্পও সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে। তার লেখার উপজীব্য কখনো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার, কখনও টেলিমেডিসিন সেবা, আবার কখনো ই-কমার্স ব্যবসা। তিনি দেখিয়েছেন, লেখার বিষয়বস্তু শুধু চিরাচরিত প্রেম-বিরহ বা সামাজিক সংঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নতুন সময়ের নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলোও হতে পারে অসাধারণ সব গল্পের উৎস।

 

মানবিক গল্পের জাদুকর

রাহিতুল ইসলামের লেখার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর মানবিক আবেদন। তিনি যে সেক্টর নিয়েই লেখেন না কেন, তার গল্পের কেন্দ্রে থাকে ‘মানুষ’। তাঁর লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি নিয়মিত নিত্য–নতুন ক্ষেত্রে আলো ফেলতে চান। যন্ত্র বা সিস্টেমের পেছনের মানুষটির আনন্দ, বেদনা, সংগ্রাম ও বিজয়ের গল্পই তিনি তুলে আনেন।

তার লেখার মূল চরিত্রগুলো পাঠকের খুব চেনা, যেন পাশের বাড়ির কেউ। এমনকি পার্শ্বচরিত্রেরাও এখানে আলাদা গুরুত্ব নিয়ে হাজির থাকেন। এ কারণেই তাকে ‘এই সময়ের মানবিক গল্পের নায়ক’ বললে অত্যুক্তি হয় না। 

রাহিতুল বিশ্বাস করেন, লেখকের মানবিকতা শুধু কলমেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এর সেরা উদাহরণ প্রথমা থেকে প্রকাশিত তার আলোচিত উপন্যাস ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’, যেখানে এক সংগ্রামী নারীর জীবন উঠে এসেছে। এই বইয়ের প্রথম রয়্যালটির অর্থ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে রাহিতুল ইসলাম বলেন, ‘পাঠকরা বই কেনেন বলেই আমি রয়্যালটির টাকাটি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের দিতে পারি।’

 

সাহিত্য থেকে পর্দায়: বিপুল জনপ্রিয়তা

রাহিতুল ইসলামের গল্পগুলো যে তরুণদের কতটা স্পর্শ করেছে, তার প্রমাণ মেলে তার সাহিত্য থেকে নির্মিত জনপ্রিয় সব কাজে। তাঁর লেখা ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত শর্টফিল্মে অভিনয় করেন আফরান নিশো ও তানজিন তিশা, যা মুক্তির পরই ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া?’ এবং সাফা কবির ও খায়রুল বাশার অভিনীত ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ এই টেলিছবি দুটিও দর্শক মহলে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্স জগৎ নিয়ে লেখা ‘ভালোবাসার হাট বাজার’ ও শেফদের নিয়ে লেখা ‘অর্পা’ বই দুটি অবলম্বনেও টেলিছবি তৈরির কাজ চলছে।

 

সাংবাদিকতা যখন সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার

রাহিতুল ইসলাম কেবল একজন লেখকই নন, তিনি প্রথম আলোর একজন দায়বদ্ধ তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক। তার ক্ষুরধার লেখনী বহু মানুষের জীবনে সরাসরি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। উদাহরণস্বরূপ প্রথম আলোতে তার সংবাদের জেরে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ মধুপুরের গায়রা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়, যেখানে তরুণেরা একসময় গাছে উঠে নেটওয়ার্কের জন্য কাজ করতে বাধ্য হতেন। একইভাবে শেরপুরের কাকরকান্দী গ্রাম নিয়ে লেখার পর সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি তিনি ভুল বিচারে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বন্দী বাদল ফরাজীর জীবনের করুণ বাস্তবতা নিয়েও লিখছেন, যা বিচার ব্যবস্থার অসংগতি তুলে ধরেছে।

 

কর্মপরিধি ও স্বীকৃতি

ইতিমধ্যে রাহিতুল ইসলামের ২৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তার ফ্রিল্যান্সিং–বিষয়ক ৬টি বই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি, ‘তথ্যপ্রযুক্তির নায়ক’ সিরিজে তিনি তুলে এনেছেন বাংলাদেশের আইসিটি খাতের পথিকৃৎদের কথা। প্রথম আলোয় ‘সুখবর’ বিভাগে প্রকাশিত তার লেখাগুলো থেকে বাছাইকৃত ২৫টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘সুখবর বাংলাদেশ’।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) এবং এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার (২০২১) লাভ করেন। তার ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইটি ফিলিপাইন থেকে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়েছে।

 

কেন তিনি প্রাসঙ্গিক?

যে সময়ে সবাই পরিচিত পথে হাঁটতে ব্যস্ত, সে সময়ে রাহিতুল ইসলাম একাই তৈরি করছেন নতুন পথ। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সূচনা করেছেন, যা একই সাথে আধুনিক ও মানবিক। তরুণ পাঠকদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতার মূল কারণ হলো, তিনি মূলত তাদের ভাষাতেই কথা বলেন। তাদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্প বলেন। সারা জীবন তরুণদের গল্পই বলে যেতে চান তিনি।

আরও পড়ুন