একুশে বইমেলা

তরুণ লেখক অসীম হিমেলের বই 'দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার'

আকরাম হোসেন

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ৩রা মার্চ ২০২২ ০১:২৭:০৮ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

একুশের বই মেলায় তরুণ লেখক অসীম হিমেল নতুন বই 'দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার'।

বই এর সাথে পাঠকের ভালোবাসা চিরচেনা। নতুন বইও তার রুপ রস আর মলাটের ঘ্রাণ দিয়ে পাঠক মনের রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে সমানতালে। 

নগর জীবনের ব্যস্ততা কাটিয়ে সাহিত্যপ্রেমীদের মিলনমেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন বই। তেমনি এবারের একুশের বই মেলায় তরুন লেখক অসীম হিমেল নতুন বই দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার। শব্দশৈলী প্রকাশনীর ব্যানারে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। দাম ৩৫০টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি শুরুতেই এক বছর পিছিয়ে জীবন শুরু করে বুয়েটে চান্স পেয়ে মেধাবী ছাত্রের খাতায় নাম লিখিয়েও শুভ্রর জীবন থেকে কেনো হারিয়ে যায় ষোল বছর। কেনই বা প্রিয় বন্ধু হয়ে যায় সিনিয়র ভাই। টেলেন্টকে কখনও দমিয়ে রাখা যায় না। জীবনের বিপর্যয়েও টেলেন্টরা ঘুরে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ কোন কারণ ছাড়াই আপন হয়ে যায়। সেটা দেশী বা বিদেশী মানুষ যে কেউ হোক না কেনো। আমেরিকার মতো সভ্য দেশে কেনো হারিয়ে যায় একটি জীবনের ষোল বছর। কেনই বা নিজের ভালোবাসার মানুষ হয়ে যায় অন্যের। কেনই বা জন্মসূত্রে আমেরিকান হয়েও মালিহা ফিরে আসে বাংলাদেশে? কেনই বা প্রিয় ব্যান্ড শিল্পী জ্যাককে কিডন্যাপ করতে বাধ্য হয় মেধাবী শুভ্র। এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার উপন্যাস।

এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মায়,যারা সমস্ত হৃদয় জুড়ে ভালোবাসা বয়ে বেড়ায় সকলের জন্য। অথচ তাদের জীবন কাটে ভালোবাসাহীন অপূর্নতায়। বুদ্ধি, মেধা, হৃদয় থাকার পরেও কিছু মানুষ হেরে যায় জীবনের খেলায়। সেরকম একজন মানুষ শুভ্র। যার মধ্যে ছিলো একজন ভালো মানুষের সমস্ত গুন। ছিলো একজন ভালো ছাত্র, তাও ভর্তিযুদ্ধে সে একবছর পিছিয়ে যায়। এই একবছরই কেড়ে নেয় তার ভালোবাসার মানুষ সুইটিকে।

শুভ্রের প্রানপ্রিয় বন্ধু কমল, রাশেদ। যারা একসাথে কাটিয়েছে সুখ দুঃখের সময়গুলো। ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামের পথে নদীর ঘাটে। গেয়েছে গলা ছেড়ে গান। সুখ দুঃখে একসাথে হেসেছে কেঁদেছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে। তিন বন্ধুর গল্প। যারা এক বছর পরে আবারও ট্র্যাকে ফিরে আসে। 

শুভ্র ভর্তি হয় বুয়েটে। হয়ে উঠে বুয়েট ক্যাম্পাসের সবার প্রিয়মুখ , বন্ধ হয় নবীনদের নিয়ে সিনিয়রদের  র‍্যাগিং খেলা। সেই শুভ্র জড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের নোংরা খেলায়। রাজনীতির পাওয়ার, ভালো ছাত্রের তকমা থাকা সত্ত্বেও কেন শুভ্র রাতের নিস্তব্দতায় গলা ছেড়ে গান গেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে?

কেন সে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমায় আমেরিকার পথে? স্বপ্নের দেশ আমেরিকা কেন কেড়ে নেয় শুভ্রর জীবনের সোনালী ষোলটি বছর! কেন সে আটকা পড়ে কুখ্যাত গুয়ান্তনামো বে নামক জেলখানায়? ষোল বছর পর দেশে ফিরে আসে শুভ্র। প্লেনে পরিচয় হয় মালিহা নামের একজন আমেরিকান মেয়ের সাথে। যে বাংলাদেশে এসেছে তার বাবার খোঁজে। ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়ে শুভ্রর সাথে। এ মালিহাকে নিয়ে গল্পের শেষে রয়েছে বিশাল টুইস্ট।

এত বছর পর দেশে ফিরে শুভ্র কি ফিরে পাবে তার পরিবার, প্রানপ্রিয় বন্ধুদের? ফিরে পাবে কি তার একসময়ের প্রিয় শহর প্রিয় স্মৃতি, প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গানগুলো? কেন সে কিডন্যাপ করে বসে তার একসময়ের আইডল, প্রিয় শিল্পী জ্যাক কে? দূরবীনে ব্যাকবেঞ্চার একটি মিউজিক্যাল মেমোরিজ বেসড উপন্যাস। প্রতিটা মানুষের গানের প্রতি ভালোবাসা আছে। প্রতিটা মানুষের কোন না কোন প্রিয় শিল্পী আছে সেটা যে কোন ধরণের হোক না কেনো।

গল্পের প্রয়োজনে একেক সময় একেক শিল্পীর গান উঠে এসেছে এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়। তাইতো গল্পের চরিত্ররা গেয়ে উঠে কখনো লাকী আখন্দের " এই নীল মনিহার" গান অথবা অঞ্জন দত্তের "ববি রায়"। এরকম ভাবে আইয়ুব বাচ্চুর "সে তারা ভরা রাতে " হাসানের সুইটি অথবা খালিদের "কোন কারনেই ফেরানো গেলো না তাকে " বা জেমসের "যে পথে পথিক নেই", মাইলসের নীলা গান। এরকম ভাবে এসেছে পার্থ, মাকসুদ বা ওয়ারফেজ সহ আরও অনেকের গান।

আমার মনে হয় শুধু গান নিয়ে প্রিয় প্রিয় শিল্পীদেরকে স্মরণ করে কোন উপন্যাস এই প্রথম। তাই এই উপন্যাস পড়তে পড়তে আপনার মনে প্রিয় সেইসব সুর বা গান বেজে উঠবে। প্রিয় শিল্পী বেঁচে থাকে প্রতিটা ভক্তের হৃদয়ে আর ভক্তের ভালোবাসায় বেঁচে থাকার অবলম্বন পায় শিল্পী। জীবনের নিয়মে নিভে যায় একসময় সকল প্রাণ। তেমনি নিভে গেছে লাকি আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চু সহ আরও অনেক প্রিয় প্রিয় শিল্পী। তাদের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা এই উপন্যাসের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন