জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের লিভ টু আপিল খারিজের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ। রায়ে জোবায়দা রহমানকে পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ই এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ বিষয়ে রায় দেয়।
পূর্নাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, পলাতক আসামী কোন মামলার আবেদন করতে পারেন না।আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হলেও, হাইকোর্টে রুল শুনানি শুরু হওয়ার মাধ্যমে,জোবায়দা রহমানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় রায়ে।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তাঁর মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।
অভিযোগপত্র দেয়ার পর মামলাটি বাতিল চেয়ে জোবায়দা রহমান হাইকোর্টে আবেদন করেন। যা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দা রহমানকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা রহমান।
তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের দুর্নীতি মামলা চলবে বলে গত ১৩ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু, সেই রায়ের কোন ব্যাখ্যা সেদিন দেননি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আজ বুধবার জোবায়দার দুর্নীতি মামলার ১৬ পাতার রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
২০০৮ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ না করে কীভাবে হাইকোর্ট এ মামলা শুনলেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন আপলি বিভাগ। বলেন, ‘এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মামলাটি শুনেছিলেন হাইকোর্ট।’
জোবায়দা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ বলেন, ‘শত বছরের নজির ভেঙে জোবায়দার মামলা গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট, যা অবৈধ এবং সংবিধানের লংঘন।’
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও জোবায়দা রহমানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।’
এ ছাড়া হাইকোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দার আত্মসমর্পণের আদেশ বাতিল করেন আপিল বিভাগ। পলাতক আসামি দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে কোনো আবেদন করতে পারবেন না উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকেই পলাতক হিসেবে গণ্য হবেন তারেকপত্নী।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিকানা ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জোবায়দার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পরে ওই বছরেই জোবায়দার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুলও জারি করেন আদালত।
এরপর জোবায়দার মামলা বাতিলের প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে ২০১৭ সালে ১২ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জোবায়দাকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেন আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন জানান জোবায়দা রহমান।