তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ২০২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় এক নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) এবং প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) সংসদ সদস্যদের মধ্যে চলা এই সংঘাত প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়।
পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে, স্পিকার নূমান কুরতুলমুশ অধিবেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য হন। তবে ব্যাপক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বাজেট বিলটি পাস হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম 'তুর্কি টুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রবিবার (২১শে ডিসেম্বর) ছিল বাজেট বিতর্কের শেষ দিন। বিতর্কের এক পর্যায়ে একে পার্টির বুরসা থেকে নির্বাচিত এমপি মুস্তাফা ভারাঙ্ক বিরোধী দল সিএইচপি-র চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেলকে লক্ষ্য করে কটাক্ষমূলক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আপনার নেতা যেন ভয় না পান। সিএইচপি পরিচালিত শহরের কৃষকরা এখনও বিনামূল্যের ট্রাক্টরের অপেক্ষায় আছে।
ভারাঙ্কের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান সিএইচপি-র সংসদ সদস্য গুনাইদিন। তিনি সরকারকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, একে পার্টি ‘রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়িতে তলানিতে পৌঁছেছে’ এবং বিরোধী পরিচালিত পৌরসভাগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তর্কযুদ্ধ আরও চরম রূপ নেয় যখন সিএইচপি গ্রুপের ডেপুটি চেয়ারম্যান আলি মাহির বাসারির প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই তা মৌখিক বিতর্ক থেকে ধাক্কাধাক্কি এবং সরাসরি কিল-ঘুষিতে রূপ নেয়। সংসদের কেন্দ্রীয় চেম্বারে উভয় দলের একাধিক সংসদ সদস্য একে অপরের ওপর চড়াও হন। সংসদীয় নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও সংঘর্ষ থামাতে হিমশিম খান।
প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলা এই অনাকাঙ্ক্ষিত লড়াইয়ের পর স্পিকার অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দেন। জানা গেছে, বিরতির সময়ও সংসদ ভবনের ভেতরে ধস্তাধস্তি অব্যাহত ছিল। তবে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২৬ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট এবং ২০২৪ সালের চূড়ান্ত হিসাব বিল পাস করা হয়।
বাজেট পাস হওয়ার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি সফল ভোটের প্রশংসা করে বলেন, আমি আশা করি ২০২৬ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট আইন প্রস্তাব, যা আজ সন্ধ্যায় তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গৃহীত হয়েছে, তা আমাদের দেশ, আমাদের জাতি এবং আমাদের অর্থনীতির জন্য শুভ হবে।
উল্লেখ্য যে, তুরস্কের পার্লামেন্টে এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছরের আগস্টেও বিরোধী দলের এক নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়ার বিতর্ককে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।
তথ্যসূত্র: সৌদি গেজেট।
ডিবিসি/এএমটি