চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের তরুণ সাইফুদ্দিন মাহমুদ রায়হান (২১) দক্ষিণ আফ্রিকায় উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে জাম্বিয়ার এক দুর্গম পাহাড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও দালাল চক্রটি এখন পলাতক, এমনকি রায়হানের লাশও ফেরত পাচ্ছে না তার পরিবার।
মিরসরাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রামের আফ্রিকা প্রবাসী ছালাহ উদ্দিনের বড় ছেলে ছিলেন রায়হান। বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করার জন্য তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে চেয়েছিলেন। এ জন্য নোয়াখালীর জয়নাল আবেদীন ফারুক নামের এক দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দেয় তার পরিবার।
গত ২৭শে সেপ্টেম্বর রায়হানসহ আরও ছয় তরুণ ঢাকার চাংখারপুল এলাকা থেকে পাসপোর্ট ও এয়ার টিকেট নিয়ে আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা দেন। কথা ছিল, তাদের দুবাই বা কাতার হয়ে আফ্রিকা নেওয়া হবে। কিন্তু দালাল চক্রটি তাদের ইথিওপিয়ায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে সড়কপথে বিপদসংকুল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে মালাউই ও কঙ্গো পৌঁছায়। এরপর কঙ্গো সীমান্ত থেকে জাম্বিয়ার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার সময় রায়হান গুরুতর অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তার সফরসঙ্গীদের বর্ণনা অনুযায়ী, অসুস্থ রায়হানকে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ পথপ্রদর্শকরা কাঁধে তুলে নিলেও কিছুক্ষণ পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে কাঁধ থেকে সজোরে মাটিতে ফেলে দেয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর আগে রায়হানের শেষ কথা ছিল, ‘আমার পাসপোর্ট আর জুতাজোড়া আব্বুর কাছে পৌঁছে দিয়েন।’
রায়হান স্থানীয় ওয়াহিদুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি-২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার সিয়াম উদ্দিন রিহান ও আল আমিন আবির নামে দুই ছোট ভাই রয়েছে।
গত ৬ই অক্টোবর রায়হানের মৃত্যু হলেও তার পরিবার মৃত্যুর খবর পায় ৭ দিন পর, সোমবার (১৩ই অক্টোবর) গভীর রাতে। বড় ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদে মা শামীমা আক্তার বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। নাতির স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করছেন দাদী শামসুন্নাহার।
রায়হানের মামাতো ভাই ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আইনুল হাসনাত রাজু জানান, তিনিই প্রথম মৃত্যুর খবরটি পান এবং সফরসঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, ‘লাশ কোথায় আছে কেউ বলতে পারছে না। দালালরা ফোন ধরছে না। কেউ বলছে তাকে মেরে জাম্বিয়ার পাহাড়ে পুঁতে ফেলেছে। আমরা সরকারের কাছে দালালদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
রায়হানের চাচা কামাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা আমার ভাতিজার লাশ ফেরত চাই। আমার ভাইয়ের বউ ছেলের শোকে কাল থেকে এক ফোঁটা পানিও মুখে দিচ্ছে না। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, ছেলের মরদেহটি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন এবং এই দালাল চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।’
ডিবিসি/এনএসএফ