কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া একটি আন্দোলন কীভাবে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটালো, তা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর শুরু হওয়া এই আন্দোলন দমন-পীড়নের মুখে শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়।
২০২৪ সালের ৫ই জুন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের একটি রায় আসে। এর প্রতিবাদে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এটি ছাত্রদের একটি সীমিত পরিসরের আন্দোলন থাকলেও, জুলাই মাসে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ৭ই জুলাই, আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়, যার ফলে সড়ক ও রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। মধ্য জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য আন্দোলনকে আরও উসকে দেয় এবং দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে।
আন্দোলন দমনে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ৯ দফা দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেয়। আন্দোলন দমনে ২০শে জুলাই সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করেই মানুষ রাস্তায় নামে, যার ফলে সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২১শে জুলাই আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। এই আইনি অগ্রগতির পর আন্দোলনকারীরা তাদের ৯ দফা দাবি থেকে ৪ দফায় নেমে আসে এবং ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে, কোনো উপায় না পেয়ে ছাত্র-জনতা তাদের ৪ দফা দাবি থেকে সরে এসে সরকার পতনের এক দফা দাবি তোলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতাদের মতে, বিগত সরকারের দমন-পীড়নের কারণেই কোটা আন্দোলন এক দফাতে যায়। তাদের বিশ্বাস, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন এমন স্বৈরাচারী হওয়ার চেষ্টা না করে।
৫ই আগস্ট ‘ঢাকা-টু লং মার্চ’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেদিন দুপুরে গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। এই ঘটনার পর সারাদেশে আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।
ডিবিসি/আরএসএল