তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার উত্তরাধিকার প্রসঙ্গটি ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রবিবার নয়াদিল্লিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানিয়েছে। এই কঠোর বার্তা এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ২০২০ সালের রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই মাসের শুরুতে দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভারতের সিনিয়র মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানের আগেই তিব্বতীয় বৌদ্ধদের এই সর্বোচ্চ নেতা তার উত্তরাধিকারের বিষয়ে চীনের কোনো ভূমিকা নেই বলে মন্তব্য করে বেইজিংকে আবারও ক্রুদ্ধ করেন। তিব্বতীয়দের বিশ্বাস, যেকোনো সিনিয়র বৌদ্ধ ভিক্ষুর মৃত্যুর পর তার আত্মা পুনর্জন্ম লাভ করে, কিন্তু চীন দাবি করে যে দালাই লামার উত্তরাধিকারের বিষয়টি তাদের নেতাদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ এক্স-এ (X) বলেন, ভারতের কৌশলগত এবং অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি দালাই লামার পুনর্জন্ম নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
১৯৫৯ সালে চীনের শাসনের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকে দালাই লামা ভারতে নির্বাসনে জীবনযাপন করছেন। ভারতীয় বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তার উপস্থিতি নয়াদিল্লিকে চীনের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত সুবিধা দেয়। ভারতে প্রায় ৭০,০০০ তিব্বতি এবং একটি নির্বাসিত তিব্বতীয় সরকারও রয়েছে।
চীনা মুখপাত্র ইউ জিং কারও নাম না বললেও, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ভারতীয় কৌশলগত বিশ্লেষক এবং একজন সরকারি মন্ত্রী দালাই লামার উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
ইউ জিং বলেন, "বিদেশনীতির পেশাদার হিসেবে, জিঝাং (Xizang - তিব্বতের চীনা নাম) সম্পর্কিত বিষয়গুলির সংবেদনশীলতা সম্পর্কে তাদের পুরোপুরি সচেতন হওয়া উচিত।" তিনি আরও বলেন, "দালাই লামার পুনর্জন্ম এবং উত্তরাধিকার মূলত চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়।"
তার ভাষায়, "(জিঝাং) সম্পর্কিত বিষয়টি ভারত-চীন সম্পর্কের মধ্যে একটি কাঁটা এবং এটি ভারতের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'জিঝাং কার্ড' খেলা হলে তা নিশ্চিতভাবে নিজের পায়েই কুড়ুল মারার সামিল হবে।"
এক সপ্তাহ আগে জন্মদিনের উৎসবে দালাই লামার পাশে বসা ভারতের সংসদীয় ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন যে, একজন বৌদ্ধ হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক গুরু এবং তার দপ্তরই তার পুনর্জন্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী।
তবে, ৪ঠা জুলাই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল যে, নয়াদিল্লি বিশ্বাস এবং ধর্মের অনুশীলন সম্পর্কিত বিষয়ে কোনো অবস্থান নেয় না বা মন্তব্য করে না।
এদিকে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ১৫ই জুলাই উত্তর চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) অধীনে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৈঠকে যোগ দেবেন এবং এর পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন। ২০২০ সালে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় এবং চারজন চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার পর ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। তারপর থেকে এটিই দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সফরগুলোর মধ্যে একটি হতে চলেছে। এই উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই চীনের এই হুঁশিয়ারি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স
ডিবিসি/জেআরওয়াই