কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তারেক হোসেনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় দূতাবাস একগুচ্ছ কার্যকর ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দূতাবাসের কঠোর অবস্থানের ফলে ভেঙে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা ভিসা দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবং অসাধু নিয়োগকর্তাদের দৌরাত্ম্যেও লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে।
একসময় কুয়েতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ছিল না কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। দূতাবাসের অনুমোদন ছাড়াই কেবল ভিসার উপর ভিত্তি করে ম্যানপাওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে কর্মী পাঠানো হতো। এই সুযোগে গড়ে উঠেছিল এক ভয়াবহ দালাল চক্র, যারা নিরীহ কর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। কিন্তু রাষ্ট্রদূতের কঠোর নির্দেশনায় সেই অনিয়মের দিন শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের নির্দেশনায় বর্তমানে যেকোনো কোম্পানিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত শ্রমিক-বান্ধব শর্তাবলী পূরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা অনুমোদনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে শ্রমিকের সাথে কমপক্ষে দুই বছরের চুক্তি, দূতাবাসের নির্ধারিত বেতন কাঠামো এবং আবাসনসহ প্রবাসীদের প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে একটি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। এরপরই দূতাবাস সেই ভিসা সত্যায়ন করছে।
বিশেষ করে গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্তাবলী আরও কঠোর ও শ্রমিক-বান্ধব করা হয়েছে। এখন নিয়োগকর্তাকে সরাসরি দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকের বেতন, বাৎসরিক ছুটি এবং অন্যান্য ভাতার নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো শ্রমিক অবিচার বা প্রতারণার শিকার হলে নিয়োগকর্তাকে সহজেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
দূতাবাসের এই কঠোর নজরদারির একটি বড় উদাহরণ হলো সম্প্রতি শ্রমিক নির্যাতনকারী কোম্পানি ‘ওয়েল আল নসিফ’-কে কালো তালিকাভুক্ত করা। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ৩ থেকে ৬ মাসের স্বল্পমেয়াদী চুক্তিতে শ্রমিক এনে তাদের কাছ থেকে ৩-৪ লাখ টাকা আদায় করত। দূতাবাসের এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো প্রকার আপস করতে রাজি নয়।
দূতাবাসের এমন দৃঢ় পদক্ষেপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরনো দালাল চক্র ও তাদের সুবিধাভোগী কুচক্রী মহল। তারা নানা ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দূতাবাসের কঠোর নিয়ম শিথিল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তারেক হোসেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় দূতাবাস কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং কোনো ধরনের আপস করবে না।
কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার পাশাপাশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রবাসীদের সার্বিক স্বার্থে আরও বেশ কিছু জনবান্ধব ও স্বচ্ছ কার্যক্রম চালু করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রতি মাসে গণশুনানির মাধ্যমে প্রবাসীদের সমস্যার কথা শোনা এবং কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দূতাবাসের সকল কর্মীদের জন্য নেমপ্লেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা, দালালদের শনাক্ত করে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা, ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল করা, দূতাবাসের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করে তথ্যসেবা বৃদ্ধি করা, প্রবাসীদের অভিযোগ জানানোর জন্য সার্বক্ষণিক অভিযোগ বাক্স ও হটলাইন চালু রাখা, মৃত প্রবাসীর মরদেহ সরকারি খরচে ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, দূতাবাসের দুর্নীতিপরায়ণ ও অযোগ্য কর্মকর্তাদের অব্যাহতি দিয়ে যোগ্য ও সৎ জনবল নিয়োগ দেওয়া, শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কুয়েত সরকারের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা।
কুয়েতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসের এই যুগোপযোগী ও দৃঢ় পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন পর তারা কুয়েতে নিজেদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ বোধ করছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তারেক হোসেনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং দূতাবাসের নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম।
ডিবিসি/আরএসএল