বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক উত্তেজনা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২৩শে ডিসেম্বর) মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই দেশ একে অন্যের হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ১৬ মাসের মধ্যে এই প্রথম একই দিনে দুই দেশে দুই দেশের দূতকে তলবের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। গত ২০শে ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও হুমকির ঘটনা এবং ২২শে ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসাকেন্দ্রে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে কড়া প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানায় ঢাকা।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে ‘অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে’ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তবে ভারতের এই অভিযোগ সরাসরি খণ্ডন করেন রিয়াজ হামিদুল্লাহ। তিনি স্পষ্ট জানান, বাংলাদেশ প্রতিটি ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা শুরু হয়। তবে গত ১০ দিনে দুই দেশ মোট চার দফায় একে অপরের কূটনীতিককে তলব করেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরল। মঙ্গলবার টানা চতুর্থ দিনের মতো দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত ছিল।
এদিকে ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা থামছে না। মঙ্গলবার দুপুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো উপদূতাবাসের সামনে মিছিল করে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা চালায়। এর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যায় বামপন্থী দলগুলোর নেতা-কর্মীরা সেখানে মিছিল করেন। তবে বামপন্থীরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেননি বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার এই কূটনৈতিক লড়াই এবং পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ডিবিসি/এএমটি