ককপিটের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দুই পাইলটের শেষ মুহূর্তের কথোপকথন গত ১২ই জুন বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার রহস্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে বিমানটির ফুয়েল-কন্ট্রোল সুইচগুলো রহস্যজনকভাবে "রান" অবস্থান থেকে "কাটঅফ" অবস্থানে চলে গিয়েছিল, যার ফলে মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি ইঞ্জিনই একসঙ্গে বিকল হয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রহস্যময় কথোপকথনটি হয় বিমানের পাইলট-ইন-কমান্ড, ৫৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার, ৩২ বছর বয়সী ক্লাইভ কুন্ডারের মধ্যে। দুর্ঘটনার সময় বিমানটি চালাচ্ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার এবং সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন অভিজ্ঞ পাইলট সুমিত সাবারওয়াল। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডিংয়ে যখন একজন জিজ্ঞাসা করেন, "তুমি কেন কাট অফ করলে?", অন্যজন তা সরাসরি অস্বীকার করেন। তাই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি পাইলটদের ভুল বা অন্য কোনো রহস্যময় সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।
ফ্লাইটটির শেষ মুহূর্তগুলো ছিল অত্যন্ত নাটকীয় ও মর্মান্তিক। উড্ডয়নের ছাড়পত্র পাওয়ার পর বিমানটি রানওয়ে ধরে এগিয়ে ৮টা বেজে ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে মাটি থেকে আকাশে ওঠে। এর ঠিক তিন সেকেন্ড পরেই, যখন বিমানটি তার সর্বোচ্চ গতিতে ওঠে, তখনই উভয় ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ "কাটঅফ" হয়ে যায়। পরবর্তী কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ইঞ্জিন শক্তি হারালে র্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। পাইলটরা মরিয়া হয়ে সুইচগুলো পুনরায় "রান" অবস্থানে ফিরিয়ে আনেন এবং অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট (APU) চালু করার চেষ্টা করেন। একটি ইঞ্জিন পুনরায় চালু হওয়ার লক্ষণ দেখালেও অন্যটি আর সচল হয়নি। অবশেষে, ৮টা বেজে ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে ককপিট থেকে আতঙ্কিত "MAYDAY MAYDAY MAYDAY" কল ভেসে আসে এবং এর মাত্র ছয় সেকেন্ড পরেই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার সাথে সাথে সমস্ত ডেটা রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায়।
এই প্রাথমিক প্রতিবেদন দুর্ঘটনার রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের অনিচ্ছাকৃত ভুল, নাকি অন্য কোনো অজানা কারণে এই বিপর্যয় ঘটল, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টের জন্য।
গত ১২ই জুন, দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন কেবিন ক্রু এবং ২ জন পাইলট নিয়ে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। কিন্তু উড্ডয়নের ৪০ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যেই দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়। পরিণতিতে, রানওয়ে থেকে প্রায় ১.৮৫ কিলোমিটার দূরে শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বিজে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বস্কুমার রমেশ ছাড়া আর কেউই বাঁচতে পারেননি। একই সাথে মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন নিহত এবং ৬৭ জন আহত হন।
ডিবিসি/এমএআর