বিবিধ

দুবাই ভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা অর্জন!

সিরাজুর রহমান

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২১শে মে ২০২৫ ১০:৫০:০৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইন্স ২০২৫ অর্থবছরে এক অভাবনীয় আর্থিক সফলতা অর্জন করেছে। এই অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি তাদের সকল কর্মীদের জন্য ২২ সপ্তাহের বিশেষ বোনাস ঘোষণা করেছে, যা বিমান শিল্পে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০২৫ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমিরেটস গ্রুপ ২২.৭ বিলিয়ন দিরহাম (৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) কর-পূর্ব মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ে তাদের মোট রাজস্ব ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫.৪ বিলিয়ন দিরহাম (৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই প্রবৃদ্ধি এমিরেটসের দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সঠিক পরিচালনারই প্রমাণ।

এছাড়া গ্রুপটির নগদ সম্পদও রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩.৪ বিলিয়ন দিরহাম (১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ৪২.২ বিলিয়ন দিরহাম (১১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) EBITDA আয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী অপারেটিং লাভজনকতা অর্জনের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

 

দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত বিনিয়োগের ফলে এমিরেটস নিজেকে বিশ্বের অন্যতম লাভজনক এয়ারলাইন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু এমিরেটসই ২১.২ বিলিয়ন দিরহাম (৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) কর-পূর্ব মুনাফা এবং ১২৭.৯ বিলিয়ন দিরহাম (৩৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) রাজস্ব আয় করেছে। তাদের নগদ সম্পদও দাঁড়িয়েছে ৪৯.৭ বিলিয়ন দিরহাম (১৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

 

এমিরেটস গ্রুপের আরেকটি অঙ্গসংস্থা dnata ১.৬ বিলিয়ন দিরহাম (৪৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) কর-পূর্ব মুনাফা এবং ২১.১ বিলিয়ন দিরহাম (৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) রাজস্ব অর্জন করেছে। এই ইউনিটের নগদ সম্পদও দাঁড়িয়েছে ৩.৭ বিলিয়ন দিরহাম (১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

 

এই আর্থিক সফলতার ভিত্তিতে গ্রুপটি তাদের মূল মালিক ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ দুবাইকে ৬.০ বিলিয়ন দিরহাম (১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) লভ্যাংশ প্রদান করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৫ অর্থবছরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্পোরেট কর নীতিমালার অধীনে এমিরেটসের জন্য প্রথম বছর, যেখানে ৯% কর হার বিবেচনায় নিয়ে কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২০.৫ বিলিয়ন দিরহাম (৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে এমিরেটস গ্রুপ প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকীকরণ, নতুন বিমান সংযোজন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৪.০ বিলিয়ন দিরহাম (৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করেছে। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের টেকসই সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

১৯৮৫ সালের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করে মাত্র দুটি ভাড়াকৃত যাত্রীবাহী বিমানের মাধ্যমে। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) থেকে ভাড়া নেয়া বিমান দিয়েই অক্টোবর ১৯৮৫ সালে তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়।

 

তবে, মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে, সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে এমিরেটস মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা এবং আজ বিশ্বের সেরা দশটি বিমান সংস্থার মধ্যে একটি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ২৬৯টি যাত্রীবাহী ও কার্গো বিমান পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে এয়ারবাস A380 ও বোয়িং 777-এর মতো বিশ্বসেরা বিমান। এছাড়াও, তাদের বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক A350 সিরিজও যাত্রীবাহী বিমান।


মাত্র কয়েক দশক আগেও এমিরেটস ছিল এক নবীন এবং অতি সাধারণ এয়ারলাইন্স। অথচ আজ কিনা এটি বৈশ্বিক বিমান শিল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশেষ করে সুশৃঙ্খল ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা, সময়োপযোগী বিনিয়োগ, কর্মীদের প্রতি সদয় মনোভাব এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনার কারণে এমিরেটস এয়ারলাইন্স আজ শুধু দুবাইয়ের গর্ব নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সফল এয়ারলাইন্স পরিচালনার একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

তথ্যসূত্র: এমিরেটস এয়ারলাইন্স, উইকিপিডিয়া, খালিজ টাইমস, গাল্ফ নিউজ।

 

লেখক: সিরাজুর রহমান, শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। 
মেইল: sherazbd@gmail.com

আরও পড়ুন