বৈধ পণ্য আনার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দেদারসে আমদানি-নিষিদ্ধ যৌন পণ্য এনে ব্যবসা করছে বেশ কয়েকটি চক্র। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিক্রি করছে এসব। সম্প্রতি বিপুল যৌন পণ্যসহ এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ক্রেতাদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাভাবিক জীবন যাপন থেকেই সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিতে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্ম।
এ বছরের গোড়ার দিকে রাজধানীর কলাবাগানে প্রেমিকের বাসায় ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের এক ছাত্রী। ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে, ছাত্রীর শরীরে সেক্স টয় ব্যবহারে রক্তক্ষরণ হয়েছিলো।
মাস্টারমাইন্ডের ছাত্রীর মৃত্যুর পরপর নিষিদ্ধ সেক্স টয়ের উৎস খুঁজতে অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ধরা পড়ে মেহেদী হাসান সনির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যদের চক্র, যারা অবৈধভাবে সেক্স টয় ও যৌন উত্তেজক পণ্য এনে ব্যবসা করছিলো। গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দেয় আরো কয়েকজন।
আট মাস ধরে নজরদারির পর সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে একটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ ধরণের বিপুল পরিমাণ সেক্স টয় ও যৌন উত্তেজক পণ্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের (তেজগাঁও) উপ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, 'শাটার সবসময় বন্ধ থাকে, কাস্টোমার যখন আসে তখনই তাদের সার্ভিস দেয়া হয়। সেক্স আইটেমগুলোর কোনটিরও লাইসেন্স নেই। কোন এক্সপায়ার ডেট নেই এবং ওষুধ প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই।'
চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বৈধ পণ্যের আড়ালে চীন থেকে এসব নিষিদ্ধ পণ্য নিয়মিত ঢুকছে দেশে। আমদানিতে সহায়তা করছেন বিমানবন্দর কেন্দ্রিক কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ওয়াহিদুল ইসলাম আরো বলেন, 'অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পন্ন এই প্রোডাক্টগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অনলাইনে এমনভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলো মানুষ বায়াসড হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই এগুলো ব্যবহার করতো।'
তরুণ প্রজন্মের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসির পেছনে অস্বাভাবিক জীবন যাপনকে দায়ী করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, 'অল্প বয়স থেকেই যৌনকার্যের যে থিমটা সেটা থেকে তারা দূরে সরে আসছে। যেখানে সেক্সের মূল উপাদানটা হলো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কটার ঘনিষ্টতা তৈরি করা। কিন্তু আমরা মানুুষের বদলে অবজেক্ট কেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছি।'
মানসিক-শারীরিক ক্ষতি ঠেকাতে তরুণ প্রজন্মকে সুস্থ যৌন শিক্ষার আওতায় আনার বিকল্প নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।