বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পুত্রবধূকে হত্যা

যশোর প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ২রা জুলাই ২০২৩ ০৩:৩৯:২৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

যশোরের চৌগাছায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ইসমত আরা (২৮) নামে এক পুত্রবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর আনিছুর রহমানের (৬০) বিরুদ্ধে। ইসমত আরা চৌগাছা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়া গ্রামের মশিয়ার রহমানের মেয়ে এবং উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদহ গ্রামের মজনুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সেলিম রেজার মামলায় নিহতের শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে এ বিষয়ে চৌগাছা থানায় হত্যা ও নারী নির্যাতন মামলা নথিভুক্ত হয়। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকারও করেছে পাষণ্ড শ্বশুর।

এর আগে শুক্রবার (৩০জুন) গভীর রাতে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদহ গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে ইসমত আরার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ এবং নিহতের শ্বশুর আনিছুর রহমান, স্বামী মজনুর রহমান ও শাশুড়ি হালিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর আগে মজনুর সঙ্গে ইসমত আরার বিয়ে হয়। তার রাব্বী (৫) ও সাব্বির (২) নামে দু’টি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই আসামিরা তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। নিহতের শ্বশুর প্রায়ই ইসমত আরাকে কুপ্রস্তাব দিত এবং বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তার হাত ধরে টানাহেঁচড়া, জাপটে ধরে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।

ইসমত আরা এ বিষয়ে তার ভাই ও বাবার কাছে জানালে তার ভাই সেলিম রেজা ও পরিবারের লোকজন বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে নিহতের স্বামী, শাশুড়িসহ কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। উল্টো তারা ইসমত আরাকে দোষারোপ করতে থাকে।

৩০ জুন বিকেল ৫টার দিকে শ্বশুর আনিছুর রহমান ইসমত আরার স্বামীর বসত ঘরের পাশে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি সে প্রতিবাদ করলে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শারীরিক নির্যাতন করে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। পরে আসামিরা তথ্য গোপন করে লোকজনের কাছে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে প্রচার করে।

সংবাদ পেয়ে নিহতের ভাই সেলিম রেজা, তার স্ত্রী হ্যাপি বেগম ও পরিবারের লোকজন তাদের বাড়িতে পৌঁছে ইসমত আরাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তার মুখে রক্তাক্ত ফেনা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন, যৌনাঙ্গে রক্ত ও বীর্য দেখতে পান। পরে চৌগাছা থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের ভাবি ঝর্ণা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ননদকে ধর্ষণের পর তার শ্বশুর আনিছুর রহমান শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে সুরতহালের সময় আমি আমার ননদ ইসমত আরার কাপড়চোপড় খুলে যা দেখেছি, তাতে বোঝা গেছে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তার কাপড়চোপড়ে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাবে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চৌগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জেল্লাল হোসেন বলেন, ‘মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি বোঝা গেছে। নিহতের শ্বশুর স্বীকারও করেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ময়নাতদন্ত রিপোর্টের আগে বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে নিহতের ভাই সেলিম রেজার মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামি নিহতের শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন