বিনোদন, টেলিভিশন, সংস্কৃতি

নন্দিত অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের জন্মদিন আজ

বিনোদন ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ২৪শে মার্চ ২০২৪ ০২:০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

নব্বইয়ের দশকের টেলিভিশনের পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের জন্মদিন আজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শিল্পের চর্চা করে চলেছেন স্বমহিমায়। একজন নাট্যকার ও নাট্য নির্মাতা হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন। বর্তমানে নিজেকে একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেও পরিচিত করতে আনন্দ বোধ করেন তিনি।

জন্মের পর থেকেই পেয়েছেন সাংস্কৃতিক পরিবার ও পরিবেশ। বাবা আবুল হায়াত একজন গুণী অভিনেতা। তাই অভিনয়ের সঙ্গে বিপাশার পরিচয় সেই ছোটবেলা থেকেই। তার ছোট বোন নাতাশা হায়াতও একজন টিভি অভিনেত্রী। আশির দশকে ‘খোলা দুয়ার’ নাটকে বাবার মেয়ে হয়েই অভিনয় শুরু করেন। এরপর যুক্ত হন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে। টিভি নাটকে প্রথমে আলোচনায় আসেন ‘অয়োময়’ ধারাবাহিক দিয়ে।
 

১৯৯০ সাল থেকেই শিল্পকলার জগতে তার বিচরণ। একে একে অভিনয় করেন শঙ্কিত পদযাত্রা, রুপনগর, ছোট ছোট ঢেউ, অন্য ভুবনের ছেলেটা, চেনা অচেনা মুখ, থাকে শুধু ভালোবাসা, বীজমন্ত্র, স্পর্শ, শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই, বিপ্রতীপ, অতিথি, হার জিত, আশিক সব পারে, বিষকাঁটার মত জনপ্রিয় নাটকগুলোতে।

পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। একসময় টিভি নাটকে তৌকীর-বিপাশা জুটি খুব জনপ্রিয় ছিল। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। সেই দশকে অনেক অভিনেত্রীই লাক্সের বিজ্ঞাপন করেছিলেন। তবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক তিনিই নিয়েছিলেন। মডেলিং জগতেও খেতাব ছিল তার। একটা সময় পর অভিনয় জগত থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। তবে যখনই ফিরে এসেছেন, তখনই নিজেকে সমাদৃত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম কাজ ছিল দিল দরিয়া, ইনসমনিয়া, শেষ বলে কিছু নেই, দুই বোন, হাতটা বাড়িয়ে দাও, চিনিখোর অন্যতম।
 

জানা যায়, নব্বই দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এ অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন বিপাশা। তবে বাণিজ্যিক ছবি করবেন না বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর দু’টি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘আগুণের পরশমনি’ ও ‘জয়যাত্রা’য় অভিনয় করেন।
 

অভিনয়ের বাইরে তিনি নাট্যকার। অনেক নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে শুধু তোমারেই জানি, শুকতারা, শঙখবাস, ঘাসফুল, প্রেরণা অন্যতম। উপস্থাপিকা হিসেবেও সুপরিচিতি আছে তার। ‘বিপাশার অতিথি’ নামক একটা অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আবৃত্তি ও গানেও দক্ষ তিনি।
 

তার অন্য আরেকটি প্রতিভা হলো তিনি একজন চিত্রশিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ১৯৯৮ সালে। বছর কয়েক আগে এসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যার্থে নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করেছিলেন। ক্যারিয়ারে নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অনেক চরিত্রকেই তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন। তার অর্জনের ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
 

হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’তে অভিনয় করে প্রথমবার এই পুরস্কার জয় করে নেন তিনি। এ ছবিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা শহরে আটকে পড়া এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের নাম রাত্রি, যিনি এক গেরিলাকে (মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বদি) ভালোবেসে ফেলেন। বদিউল আলম বৃষ্টির সময় একরাতে বাড়িতে আশ্রয়ের জন্যে আসেন। বদিউল আলম নামের সেই গেরিলা যোদ্ধার প্রতি রাত্রির প্রেম যুদ্ধের সময় গেরিলা যোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষের মমতা ও সমর্থনের প্রতিফলন।
 

তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রে তার চরিত্র ভিন্ন ধরনের। এ ছবিতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পলায়নরত এক মধ্যবয়স্কা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে তার সন্তানকে হারিয়ে ফেলে। দু’টি চলচ্চিত্রেই তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়।

অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সঙ্গে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোযোগী হয়ে পড়েন বিপাশা। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে আরিশা আহমেদ, ছোট ছেলে আরিব। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বর্তমানে ছবি আঁকা ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জয়নুল গ্যালারি, প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ডিভাইন আর্ট গ্যালারিসহ দেশে-বিদেশে বহু স্থানে বিপাশার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে।
 

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন