সাহিত্য, অন্যান্য

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ১৩ই নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২৮:৩২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের ধ্রুবতারা, কিংবদন্তি ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ। তার শব্দের জাদু এখনও মুগ্ধতা ছড়ায় ভক্তদের মধ্যে। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন পাঠকমুগ্ধ এ লেখক।

‘জীবনের রসায়ন আর মানব মনের রসায়ন যখন দূরদৃষ্টিতে এক সত্যক তুলে ধরে, তখন সেই সত্য হয়ে ওঠে  চিরন্তন এক আপ্তবাক্য’। জীবন রসিক হুমায়ুন আহমেদের বলা কথাগুলো আমাদের গভীর জীবনবোধের অঙ্গ হয়ে আছে। যখন যেখানে কলম চালিয়েছেন, নিজের সোনালী হাতের স্পর্শ দিয়েছেন, সেটাই বাংলার মানুষ গ্রহণ করেছে পরম মমতায়, পরম ভালবাসায়।

তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ বলা হয় তাকে। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সমাদৃত। রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার সৃষ্টি করা হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর হিসেবে যে যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন সত্তর দশকের শেষভাগে, সেটি মৃত্যু অবধি ধরে রেখেছিলেন তিনি। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা।

সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিল তার টেলিভিশন নাটকগুলি। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার জনপ্রিয় উপন্যাসগুলো হলো- নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তার নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো- আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, একি কাণ্ড, একদিন হঠাৎ, অন্যভুবন- এর মত নাটকগুলোর আলোচিত ডায়ালগ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়। বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই- এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনও একইভাবে জনপ্রিয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। লেখালিখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তবে তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।

দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে হুমায়ূন আহমেদ ভূষিত হয়েছেন বহু পুরস্কারে। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক।

ব্যক্তি জীবনে তিনি কিছুটা অন্তর্মুখী মানুষ ছিলেন। তার ৯০ বিঘা জমির উপর স্থাপিত এক বাগানবাড়ি আছে। বাগানবাড়িটির নাম নুহাশপল্লী। তিনি সেখানেই থাকতে ভালবাসতেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন ২০১২ সালে ১৯ জুলাইয়ের বর্ষণমুখর দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। ‘এনএইচকে’ নামে জাপানের একটি টেলিভিশন হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’। তার সাহিত্যকীর্তি আজও জনমনে নন্দিত। তিনি নেই, তবুও তিনি আছেন তার সৃষ্টির মধ্যে।

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন