ধর্ম

নারীরা ঘরে বসে ইতিকাফ করতে পারবে কি?

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ২রা মার্চ ২০২৩ ০৩:১০:৪২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া, তবে নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব। তবে ইতিকাফ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। মাহে রমজানের বরকত ও ফজিলত বিশেষত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদরের বরকত ও ফজিলত লাভের শ্রেষ্ঠতম উপায় হচ্ছে ইতিকাফ।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মদিনার জীবনে নিয়মিত প্রতি রমজানে ইতিকাফ করতেন। এক রমজানে কোনো কারণে ইতিকাফ ছুটে গেলে পরবর্তী রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করে তা পূরণ করে নিয়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৬৩)

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করিম সা. তার ওফাত পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করতেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। (সহিহ বুখারি: ২০২৬ ও সহিহ মুসলিম: ১১৭২)

ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। প্রতিটি পরিখার দূরত্ব হবে আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান।’ 

মহিলারা ঘরে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। সেখানেই ইতিকাফ করবেন। (হেদায়া: ১/২৩০, আলমগীরি: ১/২১১)

নারীরা তাদের ইতিকাফের স্থান পর্দা দিয়ে ঢেকে নিবেন। যেন ঘরে কোনো বেগানা পুরুষ লোক আসলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।

মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা, অজু। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানা বা অজু করার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন।

বিবাহিত নারী ইতিকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)

স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)

এদিকে নারীদের ইতিকাফের বিষয়ে গণমাধ্যমে এক আলোচনায় বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বলেন, নারীদের ইতিকাফ মসজিদেই হবে। মসজিদে ব্যবস্থা না থাকলে তারা ইতিকাফ করবে না। এই মাসালার মধ্যে আলেমদের দ্বীমত থাকলেও বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ কোরআনের মধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘তোমরা মসজিদের মধ্যে ইতিকাফ করবে।’  রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীগণ মসজিদে বসে ইতিকাফ করেছেন। সুতরাং, এখান থেকে বোঝা যায়, নারীরা মসজিদে বসে ইতিকাফ করবে, ঘরের মধ্যে ইতিকাফ করবে না।

ইতিকাফ করা অবস্থায় আপনি যদি ঘরের কাজ করেন, তাহলে ঘরে থাকাই আপনার জন্য ভালো। ইতিকাফরত আবস্থায় ব্যক্তিগত যে প্রয়োজন আছে সেগুলো আপনি পূরণ করতে পারবেন। যেমন : খাবার-পানি বা টয়লেটের প্রয়োজন আপনি মেটাতে পারেন। ইতিকাফ করার সময় ঘরের কাজ করা যাবে না। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মূলত মসজিদের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়া। এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে মূল বিষয় করা হয়েছে। সুতরাং, পারিবারিক কাজ যদি আপনি করেন তাহলে আপনার ইতিকাফ হবে না এবং ইতিকাফের যে ফজিলত আছে সেটি আপনি লাভ করতে পারবেন না।

আরও পড়ুন