নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন: সুফল পেতে প্রয়োগ নেই
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। কিছু ঘটনা প্রকাশিত হলেও বেশির ভাগই ধামাচাপা পড়ে যায়। এ কারণেই নির্যাতিতদের আইনি সুবিধা দিতে সরকার ২০০০ সালে প্রণয়ন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। জামিনঅযোগ্য আইনটিকে পরবর্তীতে সংশোধন করে আরো কঠোর করা হলেও নারী নির্যাতন কমেনি।
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরে পুলিশ সদস্যের দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ইয়াসমিন নামে ১৩ বছরের এক কিশোরী। এরপর হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা। প্রতিবাদে- বিস্ফোরণে পুলিশের গুলিতে মারা যান আরো ৭ জন। ইয়াসমিন হত্যা মামলায় ১৯৯৭ সালে ৩ জন পুলিশের ফাঁসির সাজা হয়। পরবর্তীতে নারীদের সুরক্ষায় এ সংক্রান্ত আগের আইনটি বাতিল করে ২০০০ সালে প্রণীত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম বলেন, সবার একটা দাবি ছিল এমন একটা আইন যাতে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়। এ আইনের ধারায় কেউ যদি কোন অপরাধ করে তাহলে তাদের সহজে জামিনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। এই আইনের ফলে নারীরা মনে করেছিল এটি তাদের জন্য স্বস্তিজনক।
আইনজীবী এডভোকেট আইনুন লিপি বলেন, ৯৫ সালের আইনে তেমন কিছুই ছিলো না, এই আইনটি অনেক সহায়ক, কিন্তু প্রায়োগিক দিকটা নাই।
আইনজীবীদের মতে আইনটি নিয়ে যতটা আশা করা হয়েছিলো, বাস্তবে তা দেখা যায় না। বিচারে দীর্ঘ সূত্রতার কারণে এই আইনে এখন ঝুলছে ২ লাখের বেশি মামলা। অভিযোগ রয়েছে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করছে আইনটিকে।
ফৌজিয়া করিম বলেন, এ আইনে জামিন পেতে অনেক সময় লাগে। ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমেও জামিন পাওয়া সম্ভব হয় না,ট্রাইব্যুনালে জামিন হয়। এসব মামলায় যে সময় বেঁধে দেয়া হয় কিন্তু দেখা যায় তা সহজেই মানা হচ্ছে না।
এই আইনে - নারী-শিশু ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, পাচার, যৌতুক, অপহরণ সহ বেশ কিছু বিষয়ে মামলা করা যায়। জামিন অযোগ্য হলেও বাস্তবতা বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাইকোর্ট আগাম জামিন দেয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, কেউ যদি থানায় এসে এ বিষয়ে কোন মামলা দেয় তাহলে পুলিশের উচিত আগে তদন্ত করা যে এমন কিছু ঘটেছে কি না। অনেক সময় অনেকে আইনের ফায়দা লুটের জন্য এসব আইনের ব্যবহার করে। আইনের সুফলতা পেতে হলে এর সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এই আইনে বাদীর নিজের কোন আইনজীবী নিয়োগ কিংবা টাকা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আইনজীবী নিয়োগ দেয় সরকার। যেটি আইনের আরেকটি ভালো দিক। তবে মামলার জট কমানো ও কার্যতই দ্রুতবিচার নিশ্চিতে আইনটির আরো আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।