বিনোদন

নায়ক রাজ রাজ্জাকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ২১শে আগস্ট ২০২৫ ০২:০৫:০১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ‘নায়ক রাজ’ রাজ্জাকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ বছর বয়সে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও অপূরণীয়।

 

১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি ভারতের কলকাতায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুর রাজ্জাক। তার বাবা আকবর হোসেন এবং মা নিসারুননেছা। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। কলকাতার থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। নায়ক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন নিয়ে ১৯৫৯ সালে তিনি মুম্বাইয়ের ফিল্মালয় থেকে সিনেমার ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর কলকাতায় ‘শিলালিপি’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

 

১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন। ঢাকায় এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য তাকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। শুরুতে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে ‘উজালা’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। পরে, সালাউদ্দিন পরিচালিত ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকার চলচ্চিত্র জগতে তার অভিষেক ঘটে।

 

তবে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় কিংবদন্তি পরিচালক জহির রায়হানের হাত ধরে। ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথমবার প্রধান চরিত্রে (লখিন্দর) অভিনয়ের সুযোগ পান। সুচন্দার বিপরীতে তার অনবদ্য অভিনয় দর্শক হৃদয়ে ঝড় তোলে এবং তাকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

 

তিন শতাধিক বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে যান। ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’ এবং ‘বড় ভালো লোক ছিল’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। সুচন্দা, কবরী, শাবানা ও ববিতার সঙ্গে তার জুটি দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। 

 

চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘চিত্রালী’র সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী তাকে ‘নায়ক রাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যা তার নামের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।

 

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং তার প্রযোজনা সংস্থা ‘রাজলক্ষী প্রোডাকশন’ থেকে বেশ কিছু সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৪, ১৯৮৮) লাভ করেন। ২০১৩ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি বাচসাস পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রাজলক্ষীর সঙ্গে এক সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করেন এবং তিনি তিন পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। 

 

ডিবিসি/এএমটি

আরও পড়ুন