আন্তর্জাতিক, এশিয়া

নিজের চিত্রকর্ম পুড়িয়ে খাদ্য জোগানের চেষ্টা গাজার চিত্রশিল্পীর!

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ২৮শে জুলাই ২০২৫ ০৬:১৫:৫৫ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে ক্ষুধা। এই দুইয়ের চাপে নিজের আঁকা ছবি পুড়িয়ে রুটি বানাতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার শিল্পী তাহা হুসেইন আবু ঘালি। ৪৩ বছর বয়সী এই চিত্রশিল্পী ও পাঁচ সন্তানের পিতা বর্তমানে পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন খান ইউনিসের পাশের আসদা সিটিতে একটি তাঁবুতে।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিল্পী তাহা হুসেইন তার আঁকা ছবি ছিঁড়ে, কাঠের ফ্রেম ভেঙে রুটি সেঁকার জন্য আগুন জ্বালাচ্ছেন। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষী, এদের আমি অনেক ভালোবাসতাম। এখন সেগুলোই ভেঙে পুড়িয়ে ফেলছি, কারণ এখন শিল্প নয়, বেঁচে থাকার নামই রুটি।’
 

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই সংকটের মধ্যে আমরা হৃদয়ের যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের চিত্রকর্ম পোড়াতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের কোনো জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, কিছুই নেই। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো সামান্য আটা বা গম জোটে, কিন্তু রান্না করার মতো কিছুই নেই। তাই আমরা কাঠ হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে রুটি তৈরি করছি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।’

খান ইউনিসের পশ্চিমে আসদা সিটিতে একটি তাঁবুতে বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন ১১ বার বাস্তুচ্যুত হওয়া এই শিল্পী ও তার পরিবার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমরা অনাহারে মৃত্যুর থেকে মাত্র এক কদম দূরে। বন্ধুদের সাহায্যে কোনোমতে টিকে আছি, কিন্তু পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা গণমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।’ কেন তিনি তার ২০টিরও বেশি চিত্রকর্ম পোড়াতে বাধ্য হলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, "এক কেজি কাঠের দাম ৮ শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা)। আর প্রতিদিন শুধু রুটি বানাতে বা সামান্য কিছু রান্না করতেই আমাদের অন্তত তিন কেজি কাঠের প্রয়োজন। ঘরের দরজা, আলমারি, এমনকি বাচ্চাদের পড়ার ডেস্কও পুড়িয়ে ফেলার পর আমার চিত্রকর্মগুলোই ছিল একমাত্র সম্বল।’
 

তাহা হুসেন আবু ঘালি শুধু একজন শিল্পীই নন, তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং একজন আর্ট থেরাপি গবেষক। পাশাপাশি তিনি আল-নাসর মডেল স্কুলে আরবি ক্যালিগ্রাফি এবং চারুকলার শিক্ষকতাও করতেন।
 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, অবিরাম বোমাবর্ষণ এবং মানবিক সহায়তার অভাবে গাজায় অপুষ্টির হার ‘উদ্বেগজনক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তাদের তথ্যমতে, শুধু চলতি বছরের জুলাই মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৪ জনই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধ ইতোমধ্যে প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।


ডিবিসি/এফএইচআর

আরও পড়ুন