মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ইলিশ শিকার শুরু করেছেন চাঁদপুরের জেলেরা।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে তারা মাছ শিকারে নদীতে নামতে শুরু করে। কিন্তু নদীতে গেলেও জেলেদের দাবি আশানুরূপ মাছ পায়নি তারা। সারারাত নদীতে কাটিয়ে তেল খরচের টাকাও জোগাড় হয়নি বলে দাবি তাদের। যদিও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি জেলেদের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে জানায় তারা।
অপরদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ২২ দিন পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে। সকাল থেকেই শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ইলিশ প্যাকেটিং করার কাজে। ক্রেতা বিক্রেতার হাত ডাকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মাছ ঘাট।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে নদী ও সাগরে মাছ ধরা ও বিপনন নিষিদ্ধ করে সরকার। গতকাল রাত ১২টায় শেষ হয় এই নিষেধাজ্ঞা। আর সাথে সাথে নদীতে নেমে পরেন জেলেরা। আবার অনেক জেলেকে সকালে নদীতে নামতে দেখা খেছে। এদিকে আড়তদাররা বলছেন বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাছের আমদানি বাড়বে এবং আগামী দুই তিন দিন পর ইলিশের সরবরাহ আরো বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে শনিবার সকালে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাট ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করে। তারা জানান, নদীতে ইলিশ পাওয়া গেলেও তেলের খরচ ও মাছ বিক্রির হিসেবে তারা এখন তেমন কিছু পায় না। সারারাত নদীতে জাল ফেলে নৌকায় অবস্থানরত জেলেদের কপালে জুটবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার শেষে ঘাটে আসা জেলে শরীফ মাঝি ও সবুজ খান জানান, ধারদেনা ও কিস্তিতে টাকা নিয়ে নৌকা ও জালের মেরামত করে নদীতে নেমে যদি নদীতে এমন মাছ পাই তাইলে আমাদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবো না। ২ হাজার টাকার জ্বালানি তেল নিয়ে ৭ থেকে ৮ জন করে জেলে নদীতে যায়। তবে মাছ বিক্রি করেছে মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এখন সব খরচ গিয়ে তাদের কপালে জুটবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে। এই টাকা দিয়ে তারা সংসার চালাবে নাকি কিস্তি পরিশোধ করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।
আড়তদার হৃদয় খান, নবীর ও বিপ্লব খান সহ বেশ কয়েকজন জানান, প্রথম দিন হিসেবে তুলনামূলক মাছ কিছুটা কম আসলেও ২২ দিন পরে ঘাটের কর্মচঞ্চল্য ফিরে আসায় খুশি তারা। তবে আগামী ১০-১৫ দিন যদি ইলিশ মাছের আমদানি তিন থেকে চার হাজার মন হয় তাহলে গত ২২ দিনের যে ক্ষতি তারা তা পুষিয়ে নিতে পারবে। তবে আমদানি কম থাকায় ইলিশের দাম কিছুটা বেশি বলেও জানান তারা।
তারা জানান, ঘাটে আসা অধিকাংশ ইলিশ বড় আকারের। ছোট আকারে রিলিজ কম হয় দাম কিছুটা বেশি। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে ৭শ থেকে ৮ শ গ্রামের ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১১০০ টাকা, ১২শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৬শ থেকে ১৭শ টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিত সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার জানান, প্রথম দিনে চাঁদপুর স্টেশন মাছ ঘাটে এক হাজার মন ইলিশের আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী দুই তিন দিন পর আশা করছি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হবে।
সে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অনেকটাই পুষে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তবে প্রথম দিনে তুলনামূলক ইলিশের দাম একটু বেশি। ভালো সাইজের একটি ইলিশ কিনতে এক হাজার টাকার প্রয়োজন।