জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নন্দনকানন নুহাশপল্লীতে পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় লেখককে স্মরণ করলেন।
বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদ হুমায়ুনের উপস্থিতিতে কবর জিয়ারত করা হয়। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। আয়োজন করা হয় কুরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল।
কবর জিয়ারতের পর হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘হুমায়ুন আহমেদ চলে গেছেন ১১ বছর। এখনও হুমায়ুন আহমেদের নাটক যদি ইউটিউব বা চ্যানেলে চলে, আমরা শেষ না করে উঠতে পারি না। তবে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য হুমায়ুন আহমেদের বহু নাটক, সিনেমা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে কোনো রকম চুক্তিপত্র ছাড়াই চালানো হচ্ছে। হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকতেও অনুমতি নেয়নি, মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার কারও সঙ্গে চুক্তি বা মৌখিক অনুমতি নেয়নি। দেশের এসব প্রথম সারির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি কিন্তু তারা এটি গ্রহণ করেননি এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ যখন মারা যান তখন আমার বড় ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স দেড় বছর ছিল। তখন ওরা বাবার অভাব ও প্রয়োজন তেমন বুঝত না। তবে এখন ওরা বড় হয়েছে। বড় ছেলে এখন বুঝে একজন মানুষ হুমায়ুন আহমেদ নামটির কী ভার। মাঝেমধ্যে ও মন খারাপ করে বসে থাকে। ও বলে, যদি বাবাকে পেতাম, তাহলে অনেক গল্প করতাম, অনেক কিছু শিখতাম। এই যায়গাটায় আমি থমকে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ কত যে চমৎকার সব গল্প করতেন। সন্ধার পর যখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতেন, সেই আড্ডার ছলে কত শত জ্ঞানের কথা বলতেন, এখন তিনি না থাকায় আমাকে ভাবায়। হুমায়ুন আহমেদ তার বাবাকে স্মরণ করে তার এলাকায় শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্বপ্নের স্কুল থেকে এখন ভালো রেজাল্ট আসছে। তার স্বপ্ন ছিল এটি কলেজ হবে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে৷ সম্প্রতি আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিং করেছি, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই স্কুলটি কলেজে রুপান্তর করা হবে।’
আরও পড়ুন: জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবস আজ
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা ফয়জুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে তাকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার স্বপ্নের নুহাশপল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও হুমায়ূন আহমেদের শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে।
১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য।
ডিবিসি/আরপিকে