বিশ্বের পপ সঙ্গীতের একচ্ছত্র সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন। মাত্র ৫১ বছরের জীবনে দুনিয়াটাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার গান আর নাচের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছিল গোটা বিশ্ব। তিনি মাইকেল জ্যাকসন। আজ ২৯শে আগস্ট, পপ সঙ্গীতের এই মহাতারকার ৬৭তম জন্মদিন। মৃত্যুর প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও ভক্তদের হৃদয়ে তিনি আজও অমলিন।
১৯৫৮ সালের এই দিনে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন স্ট্রিটের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। বাবা ছিলেন একজন বক্সার এবং মা ক্ল্যারিনেট ও পিয়ানো বাজাতেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘জ্যাকসন ফাইভ’ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে পেশাদার সঙ্গীত জগতে পা রাখেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় তার বিশ্বজয়ের যাত্রা, ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন ‘কিং অব পপ’।
১৯৭১ সাল থেকে একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন মাইকেল। ১৯৮০-এর দশকে তিনি কেবল একজন সঙ্গীতশিল্পীই নন, বরং একজন প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। তার "থ্রিলার" অ্যালবামটি আজ পর্যন্ত ১১০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, যা বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত অ্যালবাম। এছাড়াও ‘হিস্টরি’, ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘ব্যাড’-এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় অ্যালবাম দিয়ে তিনি সঙ্গীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার প্রথম রিমিক্স অ্যালবাম ছিল ‘ব্লাড অন দ্য ডান্স ফ্লোর: হিস্টরি ইন দ্য মিক্স’।
শুধু গান নয়, তার নাচের অসাধারণ শৈলীও তাকে বিশ্বজুড়ে অনন্য করে তুলেছিল। বিশেষ করে তার ‘মুনওয়াক’ এবং ‘রোবট ডান্স’ আজও তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৮৭ সালে ‘স্মুথ ক্রিমিনাল’ গানের ভিডিওতে অভিকর্ষকে উপেক্ষা করে তার ৪৫ ডিগ্রি কোণে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ার দৃশ্যটি সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই অবিশ্বাস্য নাচের মুদ্রাটির পেটেন্টও তিনি ১৯৯২ সালে নিজের নামে করে নেন।
২০০১ সালে মুক্তি পায় তার জীবনের দশম এবং সর্বশেষ স্টুডিও অ্যালবাম ‘ইনভিন্সিবল’। ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই অ্যালবামটি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল। ২০১০ সালে বিলবোর্ড পোলে এটি ২০০০-২০১০ দশকের সেরা অ্যালবাম হিসেবে নির্বাচিত হয়।
জীবনের শেষ দিনগুলো মাইকেল জ্যাকসনের জন্য সুখকর ছিল না। তীব্র অর্থাভাব এবং মানসিক চাপে তিনি ক্রমশ একা হয়ে পড়ছিলেন। লন্ডনে একটি শো-এর মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার সেই ফেরা আর হয়নি। ২০০৯ সালের ২৫ জুন, মাত্র ৫০ বছর বয়সে, তীব্র ব্যথানাশক ড্রাগ প্রপোফলের প্রতিক্রিয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান এই কিংবদন্তী শিল্পী।
মাইকেল জ্যাকসন আজ শারীরিকভাব অনুপস্থিত থাকলেও, তার গান ও সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল সেলিব্রিটি এবং সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন পাওয়া গায়ক হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছেন, যা তার কিংবদন্তিতুল্য যাত্রার এক উজ্জ্বল স্বীকৃতি।
ডিবিসি/এনএসএফ