খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ইস্টার সানডে আজ (৩১ মার্চ)। পুণ্য শুক্রবার বা গুড ফ্রাইডেতে বিপথগামী ইহুদি শাসকগোষ্ঠী তাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন শাসনব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্টকে অন্যায়ভাবে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। মৃত্যুর তৃতীয় দিবসে (রবিবার) তিনি জেগে ওঠেন বা পুনরুত্থান করেন।
ইস্টার সানডে বা পবিত্র রবিবার হলো খ্রিষ্টিয় ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিষ্টানরা আজকের এদিনে মৃত্যুর বিরুদ্ধে যিশুখ্রিষ্টের বিজয় উদযাপন করে। খ্রিষ্টে বিশ্বাসীদের কাছে এটি পুরোনো জীবনের অবসানের পর নতুন জীবনের শুরুর প্রতীক। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মতে, মৃত্যুর তৃতীয় দিবস অর্থাৎ রবিবার দিন তিনি মৃত্যু থেকে জেগে ওঠেন। মৃত্যুকে জয় করে আবারও মানুষের মাঝে ফিরে আসেন। পুনরুত্থানের এ সংবাদ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য খুবই আনন্দের এবং খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
খ্রিষ্টীয় ধর্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি হলো, যিশুর ক্রুশে জীবনদান এবং গৌরবদীপ্ত পুনরুজ্জীবন। মানুষের সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে যাওয়াই ইস্টার সানডে বা যিশুর পুনরুত্থান দিবসের মূল বাণী। ইস্টার সানডে উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা বেশ কয়েকদিন ধরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।
ইস্টারের দিনক্ষণ নিয়ে শুরুর দিকে নানা মত প্রচলিত ছিল। ‘স্প্রিং ইকুইনক্স’ বা মহাবিষুব-এর সময় এ উৎসব পালন করা হতো। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার বছর নিয়েও মতান্তর রয়েছে। দু’টি মতবাদ অনুসারে ৩৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রুশবিদ্ধ হন। তবে স্যার আইজাক নিউটন গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি মেপে সময়টাকে ৩৪ খ্রিষ্টাব্দ বলে দাবি করেছিলেন। বলা হয়, যিশুখ্রিষ্টের পুনরুত্থান কিংবা নবজন্মকে স্মরণ করার জন্য এই বিশেষ দিনটির নামকরণ করা হয়েছে দেবী ‘ইয়োস্ত্রে’ র নামানুসারে।
সারা বিশ্বেই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করেন। বিশ্বের প্রতিটি গির্জাতে ইস্টার সানডে উপলক্ষ্যে প্রার্থনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বড়দিনের মতো ইস্টার সানডে নির্দিষ্ট কোনো তারিখে পালিত হয় না। বলা হয়, ২১ মার্চের পর যখন আকাশে প্রথম দেখা যায় পূর্ণ চাঁদ, তার পরের রবিবার পালন করা হয় ইস্টার। মূলত গ্রেগরিয়ান এবং জুলিয়ান ক্যালেন্ডারসহ বেশ কয়েকটি দিনপঞ্জিকার হিসেব মিলিয়ে বের করা হয় ইস্টারের তারিখ, যা ৪ এপ্রিল থেকে ৮ মের মধ্যে যেকোনো সময় হতে পারে।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরে যিশুর পুনঃজন্মের প্রতীক হিসেবে এ দিন ‘ইস্টার এগ’ বিতরণ করা হয়। যেগুলোতে নানা রঙ দিয়ে কারুকার্য করা হয়। আজকাল চকোলেট দিয়েও তৈরি ডিম্বাকৃতির এই ‘ইস্টার এগ’ বিতরণ করা হয়ে থাকে। ছোটদের জন্য রবিবার রাস্তায় রাস্তায় ‘ইস্টার বানি’ সেজে ঘুরে বেড়ানোর প্রথা রয়েছে তারা ছোটদের ‘চকোলেট এগ’ উপহার দেয়। এ ছাড়াও নানান জায়গায় ‘ইস্টার এগ’ নিয়ে মজার খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
ডিবিসি/আরপিকে