বিবিধ, লাইফস্টাইল

পরীক্ষায় ৩৩ নম্বরে পাশ যেভাবে এলো

হ্যাপী মাহমুদ

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ২৯শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৫:২১:৫৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩৩ নম্বর পেলেই পাশ বলে ধরে নেয় ছাত্র-ছাত্রীরা। এর কম পেলেই কপালে জোটে ফেলের তকমা। স্কুল জীবনে কখনও কি মনে এসেছে যে পরীক্ষায় পাশ করতে আপনাকে কেন ৩৩ শতাংশ মার্কস পেতে হয়? কেন এর বেশি বা কম নম্বর নয়?

এই পদ্ধতিটা কিভাবে এলো, তা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। চলুন জেনে নেয়া যাক ৩৩ নম্বরে পাশের রহস্য।

মজার ব্যাপার হলো ৩৩ শতাংশ নম্বর পাশ নম্বরে হিসেবে স্বীকৃত শুধু বাংলাদেশে নয়; ভারত ও পাকিস্তানেও শিক্ষার্থীদের নম্বরে করতে একই নম্বর পেতে হয়। এরই মধ্যে হয়তো কেউ কেউ অনুমান করেই নিয়েছেন যে, উপমহাদেশে পাশের মার্কস ৩৩ হওয়া মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশের উত্তরাধিকার।

১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বিট্রিশরা উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা দখল করে। এর ১০০ বছর পর বিট্রিশ ভারতের জনগণ স্বাধীনতা ফিরে পেতে প্রথমবারের মতো সফল আন্দোলন করে ১৮৫৭ সালে, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ১৮৫৮ সালে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু পাশ নম্বর কত হবে তা নির্ধারণ নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় এবং ব্রিটেনে কনসালটেশনের জন্য চিঠি পাঠান।

তখন ব্রিটেনে স্থানীয় ছাত্রদের পাসের জন্য ৬৫ শতাংশ নম্বর পেতে হতো। সে সময় ইংরেজ সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল ‘The people of subcontinent are half as intellectual and efficient as compared to the British’ অর্থাৎ বুদ্ধি ও দক্ষতায় উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক মনে করা হতো।

একই ধারাবাহিকতায় মেট্রিকুলেশনের পাশ নম্বর ৬৫ এর অর্ধেক ৩২.৫ নির্ধারণ করা হয়। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত পাস নম্বর ৩২.৫ ই ছিল। ১৮৬২ সালে তা গণনার সুবিধার্থে বৃদ্ধি করে ৩৩ করা হয়। সেই থেকে এই ৩৩ নম্বরই পাশমার্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেক সময়, ৩২ পেলেও পাশ করিয়ে দেওয়া হয়।

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই অনুমাপক ব্রিটিশদের কাছে থেকে পুরোপুরি কপি করেছে। ১৬০ বছর পরেও উপনিবেশিক প্রভুদের নিয়মেই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হয়ে চলেছে। বলা চলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও আমাদের মগজে উপনিবেশ!

তবে সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষায় পূর্ণমান ১০০-এর বিপরীতে পাশ নম্বর ৪০ নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সালে তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান প্রথম এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারই ধারাবহিকতায় ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চিন্তা করেছে। পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে পাশ নম্বর ৪০।

চীনের পদ্ধতি আবার বেশ মজার জিনিস। চীনে পাশ করতে হলে সাধারণত শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নাম্বার পেতে হয়। কিন্তু এত নম্বর তোলার জন্য অনেকেরই বেশ কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে তাদের জন্য চীনের অর্ধেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মার্ক ব্যাংকের সাহায্য নিতে হয়। যদি কেউ পাশের চেয়ে কম নম্বর পায় তাহলে সেখান থেকে ধার নিতে পারেন। তবে পরের পরীক্ষা যদি বেশি নম্বর পায় তাহলে ধার দেওয়া নম্বর কেটে রাখা হয়। 

চীনের মতো ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করতে পারে জাপান, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আফগানিস্তানের ছাত্র-ছাত্রীরাও। আর ইরান, ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে পাশ মার্ক হচ্ছে ৫০। এদিকে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ যুক্তরাজ্য এবং কানাডার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয় সিজিপিএ-এর ভিত্তিতে।

বর্তমানে লিখিত পরীক্ষার বাইরে প্রেজেন্টেশন, ফিল্ডওয়ার্ক, এ্যাসাইনমেন্ট এবং মৌখিক সাক্ষাৎকারের উপরে অনেক সময় পাশ-ফেল নির্ধারণ করা হয়। বিশেষত মৌখিক পরীক্ষার একাডেমিক ক্ষেত্রেও তা বটে। পাশাপাশি কর্পোরেট সেক্টরগুলো তা বহুল প্রচলিত।

আরও পড়ুন