আন্তর্জাতিক, ভারত

পশ্চিমবঙ্গে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১৮ই জুন ২০২৪ ০১:৩৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ির কাছে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছ। অন্তত ৬০জন আহত হয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি’র।

সোমবার (১৭ জুন) স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন সকাল পৌনে নয়টার দিকে দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানি স্টেশনের কাছে যাত্রীবাহী ওই ট্রেনের পিছনে একটি মালগাড়ি ধাক্কা দেয়।

 

সংঘর্ষের তীব্রতায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে একটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের উপরে উঠে যায়, অন্য দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনার কবলে আসা বগির মধ্যে দু’টি পার্সেল ভ্যান রয়েছে এবং একটি গার্ডের কোচ।

 

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের রানীপাত্র রেলওয়ে স্টেশন এবং ছাত্তার হাট জংশনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং সিস্টেম, সকাল ৫.৫০ থেকে কাজ করছিল না বলে পিটিআইকে জানিয়েছেন এক রেলের কর্মকর্তা। দুর্ঘটনার পিছনে এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হিসাবে অনুমান করা হচ্ছে।

 

"ট্রেন নং ১৩১৭8 (শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস) রাঙ্গাপানি স্টেশন থেকে সকাল ৮.২৭ নাগাদ ছেড়ে যায়। রানীপাত্র রেলওয়ে স্টেশন এবং ছাত্তার হাটের মধ্যে ট্রেনটি থেমেছিল কারণ সকাল ৫.৫০ থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং-এ ত্রুটি দেখা দিয়েছিল", পিটিআইকে বলেছেন ওই কর্মকর্তা।

 

অন্য দিকে, প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে মালবাহী ট্রেনের চালক সিগন্যাল দেখেননি বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের সিইও এবং চেয়ারপার্সন জয়া ভার্মা সিনহা।

 

আগরতলা থেকে শিয়ালদহমুখী ১৩১৭৪ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা আরও একবার উস্কে দিয়েছে ২০২৩ সালের ওড়িশার বালাসোরের কাছে ঘটা ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতিকে।

 

সেই ঘটনায় বালেশ্বরের কাছে বাহানগা স্টেশনের কিছুটা দূরে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখে পড়ে হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বালাসোরে ২০২৩ সালের দোসরা জুন রাতে দুটি যাত্রীবাহী এবং একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২৯৩ জনের, আহত হন এক হাজারেরও বেশি মানুষ।

 

সোমবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার এক্সপ্রেসের এক যাত্রী শ্রুতিরাজ রায় তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, "হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। আশঙ্কা করেছিলাম ট্রেনের বগি হয়তো লাইনচ্যুত হয়েছে কিন্তু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ তখনও বুঝতে পারিনি।" ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করেন।

 

এরপর দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় রেল পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সেনা বাহিনী, ন্যাশানাল ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম, চিকিৎসক-সহ উদ্ধারকারী টিম। যুদ্ধকালীন তৎপরতাতে শুরু হয় আক্রান্তদের উদ্ধারের কাজ ।

 

উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি এবং দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়া রয়েছে। বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকারীদলকে সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়।

 

ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের সিইও এবং চেয়ারপার্সন জয়া ভার্মা সিনহা জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে ট্রেনের যাত্রী, মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের গার্ডও রয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করার পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

ঘটনাস্থল থেকে দার্জিলিং পুলিশের অ্যাডিশনার এসপি (কার্শিয়াং) অভিষেক রায় বলেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে মালগাড়ি ধাক্কা মারে। যার ফলে তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয় । উদ্ধারকার্য চালানো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকার্যে অনেক সাহায্য করেছেন।”

 

“গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে মালগাড়ির ইঞ্জিন বার করতে হচ্ছে। সামনে একটি জায়গায় অস্থায়ী ভাবে আহতদের নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে”, জানান তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

 

ডিবিসি/এএনটি

আরও পড়ুন