ভারতের সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করল, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে তারা কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। অবশ্য তার নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেনি। দেশটির সেনাপ্রধান বলেছেন, চার দিন ধরে চলা সংঘাত কোনোভাবেই পরমাণু যুদ্ধের কাছাকাছি যায়নি।
শনিবার (৩১শে মে) সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা সংলাপে অংশগ্রহণের এক ফাঁকে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অনিল চৌহান। তিনি বলেন, ‘এটাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। বরং কেন সেগুলো ভূপাতিত হয়েছে, সেটিই আসল বিষয়।’
অনিল চৌহান বলেন, পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি রাফাল। তাদের এই দাবি ‘একেবারেই ভুল’।
অবশ্য কয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি ভারতের সেনাপ্রধান। যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানি দাবি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জেনারেল চৌহান বলেন, কেন ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হলো, কী ভুল ছিল—এটিই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সংখ্যা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
জেনারেল চৌহান বলেন, ‘সংঘাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কোনো আশঙ্কা ছিল না। সংঘাতের মধ্যে অনেক জায়গায় যোগাযোগের পথ খোলা ছিল, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বলেন, ‘ভালো দিক হলো, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুল বুঝতে পেরেছি এবং তা সংশোধন করেছি, ঠিক করেছি। দুই দিন পর আবারও সেই কৌশল প্রয়োগ করে সব যুদ্ধবিমান উড়িয়ে দিয়েছি। এবার দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।’
৭ মে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এটিই প্রথম সরাসরি বক্তব্য।
এই মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেন, তার দেশ ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে এই দাবি এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা হয়নি। ভারত সরকারও যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়ে এর আগে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাশাপাশি সীমান্ত বরাবর গোলাবারুদ ও হালকা অস্ত্র দিয়েও গুলিবিনিময় হয়।
জেনারেল চৌহান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রচলিত সামরিক অভিযান ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমার মধ্যে অনেক ফারাক আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ‘সব সময় খোলা’ ছিল।
চৌহানের ভাষায়, উত্তেজনার ধাপে ধাপে আরও অনেক ছোট ছোট স্তর ছিল, যেগুলো ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করেই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব ছিল।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি গবেষণা সংস্থা এই মাসে জানিয়েছে, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও স্যাটেলাইট সহায়তা দিয়েছে চীন।
ভারতের সামরিক প্রধান বলেন, ‘কড়া আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমরা পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার গভীরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, তাদের বাহিনী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে চায়। তবে ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
ডিবিসি/এএমটি