বাংলা সাহিত্যে তার মতো জনপ্রিয় লেখক এখনো বিরল। আর কিছু নয় কেবল 'দেবদাস'-উপন্যাসের জন্যই তিনি পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আজ তার জন্মদিন। ১৮৭৬ সালের এ দিনে জন্ম নেন তিনি।
পাঁচটি ভাষায়, ১৬ টি সিনেমা- শুধু দেবদাস নিয়ে। আর কোন উপন্যাস নিয়ে এত সিনেমা নির্মাণের রেকর্ড নেই। দেবদাস নিয়ে সিনেমা নির্মাণ শুরু নির্বাক যুগে। ১৯২৮ সালে নরেন মিত্র প্রথমবার পর্দায় তুলে ধরেন দেবদাসকে। যার প্রিন্ট পরে আর পাওয়া যায়নি।
১৯৩৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই বাংলায় আটবার সেলুলয়েডে উপস্থাপন করা হয় দেবদাসকে।
১৯৩৫ বাংলায় নির্মিত প্রথমবার দেবদাসের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রমথেশ বড়ুয়া, পার্বতী হন যমুনা বড়ুয়া এবং চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় চন্দ্রাবতী দেবী।
কলকাতার নিউ থিয়েটারে আগুন লেগে প্রাচীন দেবদাসের মূল প্রিন্ট ধ্বংস হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে ছবিটির একমাত্র কপি এখনো রয়েছে যার ৪০ ভাগের বেশি নষ্ট।
আশির দশকে দেবদাস হয়ে পর্দায় আসেন ঢাকার সিনেমার 'মহানায়ক' খ্যাত বুলবুল আহমেদ৷ দেবদাস বুলবুলের পার্বতী হয়েছিলেন মিষ্টিকন্যা কবরী। চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ারা।
সাদাকালো সেই দেবদাস নির্মাণ করে মন ভরেনি চাষী নজরুলের। তাই তো তিনি ২০১৩ সালে নির্মাণ করলেন রঙিন দেবদাস। এবার দেবদাস চরিত্রে শাকিব খান। পার্বতী হলেন অপু বিশ্বাস। মৌসুমি হলেন চন্দ্রমুখী। চুনি লাল চরিত্রে শহিদুজ্জামান সেলিম ছিলেন অনন্য।
কলকাতায় দেবদাস হয়েছেন সৌমিত্র, উত্তম কুমার হয়েছিলেন চুনিলাল। নতুন করে আবার টালিগঞ্জে দেবদাস নির্মাণের ঘোষণা হয়েছে। তবে এবার হবে ওয়েব সিরিজ।
সব ছাপিয়ে ২০০২ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালি নির্মাণ করেন দেবদাস নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত সিনেমাটি। শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হিন্দি দেবদাসে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। পার্বতী ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন আর চন্দমুখী মাধুরী দিক্ষিত।
এর আগেও হিন্দিতে দেবদাস হয়েছে। ১৯৫৫ সালে সাদাকালোয় নির্মিত দিলীপ কুমারের দেবদাস এখনো মন ছুঁয়ে যায়। তাতে পার্বতী চরিত্রে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাজ্ঞী সুচিত্রা সেন।
পাকিস্তান, তেলেগু ও অহমিয়া ভাষাতেও হয়েছে দেবদাস। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের নাদিম শাহ দেবদাস নির্মাণ করলে পাকিস্তান সেন্সর বোর্ড আটকে দেয় । ছবিটি থেকে মদ্যপানের দৃশ্য ছেঁটে ফেলতে বলেছিল পাকিস্তানের সেন্সর বোর্ড।
পাবর্তীর কী হয়েছিলো সে খবর আর কেউ রাখেনি, তবে দেবদাস পায়নি পাবর্তীকে। এই চিরন্তন হাহাকার দেবসাদকে অমরত্ব দিয়েছে। ক্লাসিক এক প্রেম কাহিনি বার বার ফিরে এসেছে রূপালি পর্দায়- যার স্রষ্টা হয়ে বাঙালি পাঠকের মনে যুগ যুগ ধরে বিরাজ করছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।