ভূমিকম্প কতটা শক্তিশালী ছিল, তা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। সেই হিসাবে রাশিয়ার আজকের ভূমিকম্প ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ ভূমিকম্পের একটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ৮ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের তালিকায় ৬ নম্বরে স্থান পেয়েছে। আসুন, পৃথিবীর বুকে ঘটা সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি ভূমিকম্পের সেই প্রলয়ংকরী তালিকার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিই।
শক্তিমত্তা ও ধ্বংসের বিচারে ১০ম স্থানে রয়েছে ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। সেই ভূমিকম্পে পুরো সুমাত্রাজুড়ে ব্যাপক ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।
২০০৪ সালের দুঃস্বপ্নের পর ইন্দোনেশিয়া আবার কেঁপে ওঠে ২০১২ সালে। তবে এবারের ধরন ছিল ভিন্ন। এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘স্ট্রাইক-স্লিপ’ ভূমিকম্প, যেখানে প্লেটগুলো একে অপরকে ধাক্কা না দিয়ে পাশাপাশি ঘষে চলে যায়।
অষ্টম ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের র্যাট দ্বীপে ১৯৬৫ সালে এবং সেটির মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭।
এক শতাব্দীরও বেশি আগে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে অনুভূত হয় পৃথিবীর ৭ম শক্তিশালী ভূমিকম্পটি। এর শক্তি এতটাই ছিল যে এর ফলে সৃষ্ট সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো এবং জাপানেও পৌঁছে গিয়েছিল। সেই প্রলয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
চিলি ভূমিকম্পের দেশ। ২০১০ সালে ৮.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প আবারও সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। ৫২৫ জনের জীবন নেয়া সে ভূমিকম্পকে আছে তালিকার ৬ষ্ঠ স্থানে।
১৯৫২ সালে রাশিয়ার কামচাটকায় ইতিহাসে রেকর্ড হওয়া প্রথম ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যা বিশ্বকে পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী প্রাকৃতিক শক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি ধরা হয় জাপানের তোহকু অঞ্চলের ভূমিকম্পটিকে। । এই দুর্যোগ বিশ্ব দেখেছিল টেলিভিশনের পর্দায় লাইভ। ভূমিকম্পের চেয়েও ভয়ঙ্কর ছিল এর পরের ঘটনা। প্রায় ৪০ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউ জাপানের উপকূলীয় শহরগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটায়। এই দ্বৈত আঘাতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান এবং ঘরছাড়া হন লাখ লাখ মানুষ।
তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের ২০০৪ সালের ভূমিকম্পটি। ভারত মহাসাগরের তলদেশে ঘটে যাওয়া এই ভূমিকম্প এক ভয়াল ‘জলদানব’-এর জন্ম দেয়। সেই সুনামির ঢেউ ১৪টি দেশের ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।
উত্তর আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে একবাক্যে মেনে নেয়া হয় ১৯৬৪ সালের গ্রেট আলাস্কা ভূমিকম্পকে। প্রায় সাড়ে চার মিনিট ধরে চলা এই কম্পনে আলাস্কার ভূমি যেন শূন্যে উড়ছিল।
তালিকার শীর্ষে থাকা ভূমিকম্পটি শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি একটি মানদণ্ড, প্রকৃতির শক্তির চূড়ান্ত নিদর্শন। ১৯৬০ সালে চিলিতে নয় দশমিক পাঁচ মাত্রার এই ভূমিকম্পে পুরো পৃথিবী যেন কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু এর আসল তাণ্ডব ছিল এর জন্ম দেওয়া সুনামি, যা চিলি থেকে হাওয়াই, জাপান, ফিলিপাইন পর্যন্ত পৌঁছে ধ্বংসলীলা চালায়। এটিই পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড হওয়া সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
ডিবিসি/এফএইচআর