চাঁদের পৃষ্ঠে, বিশেষ করে এর মেরু অঞ্চলে, মরিচা শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। হেমাটাইট নামক এই মরিচা আবিষ্কারের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে, কারণ মরিচা পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জল ও অক্সিজেন চাঁদে প্রায় নেই বললেই চলে। তবে নতুন গবেষণা বলছে, এই অবিশ্বাস্য ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আমাদের এই পৃথিবী এবং তার বায়ুমণ্ডল।
বিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন চাঁদে পরিবাহিত হয়। সাধারণত, সূর্য থেকে আসা চার্জযুক্ত কণা বা সৌর বায়ু চাঁদকে সব সময় আঘাত করে। কিন্তু প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ দিন, যখন চাঁদ পৃথিবীর আড়ালে চলে আসে, তখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetotail) একটি ঢাল হিসেবে কাজ করে সৌর বায়ুকে আটকে দেয়। ঠিক এই সময়েই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর থেকে অক্সিজেন কণা, যা ‘আর্থ উইন্ড’ বা পৃথিবীর বাতাস নামে পরিচিত, চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছানোর সুযোগ পায় এবং সেখানে থাকা লোহার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে মরিচা তৈরি করে।
গবেষকরা নিজেদের তত্ত্ব প্রমাণ করতে পরীক্ষাগারে একটি সিমুলেশনের মাধ্যমে চাঁদের পরিবেশ তৈরি করেন। সেখানে তাঁরা চাঁদের মাটির মতো লৌহসমৃদ্ধ খনিজ পদার্থের উপর উচ্চশক্তিসম্পন্ন অক্সিজেন কণা নিক্ষেপ করেন এবং দেখতে পান খনিজটি হেমাটাইটে রূপান্তরিত হচ্ছে। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী শুয়াই লি এই পরীক্ষাকে "একটি দুর্দান্ত পরীক্ষা" বলে প্রশংসা করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রথম চাঁদের মেরুতে হেমাটাইটের অস্তিত্ব খুঁজে পান। চাঁদে মরিচা পড়ার এই প্রক্রিয়ার জ্ঞান ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযান, সেখানে সরঞ্জাম ডিজাইন এবং সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার "পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বস্তুগত বিনিময়ের" এক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
সূত্র: ন্যাচার ডট কম
ডিবিসি/এনএসএফ