বিবিধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

পৃথিবীর রেডিও তরঙ্গ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ায় তৈরি হচ্ছে অদৃশ্য ঢাল, বাড়ছে ঝুঁকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

৪ ঘন্টা আগে
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে ব্যবহৃত রেডিও তরঙ্গ আর ভূপৃষ্ঠেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশ পর্যন্ত। এই তরঙ্গের প্রভাবে পৃথিবীর চারপাশে মহাকাশে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অপ্রত্যাশিত ও অদৃশ্য বলয় বা ঢাল।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, মানুষের তৈরি এই তরঙ্গের কারণে পৃথিবীর অদূরে থাকা ক্ষতিকর বিকিরণের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে শক্তিশালী সৌরঝড়ের সময় এই বিকিরণ বলয়ে এমন কিছু অস্থায়ী কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং মহাকাশচারীদের জন্য বাড়তি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

নাসার ‘ভ্যান অ্যালেন প্রোবস’ মহাকাশযান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক দশক ধরে সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ‘ভেরি লো ফ্রিকোয়েন্সি’ (VLF) বা অত্যন্ত নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, এই তরঙ্গগুলো কেবল পৃথিবীর কাছাকাছি স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। 

 

কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই তরঙ্গের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাকাশে প্রবেশ করছে এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আটকে থাকা বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাচ্ছে।

 

এই ঘটনাটি ঘটছে মূলত ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট বা বিকিরণ বলয় এলাকায়। এটি পৃথিবীর বিষুবীয় অঞ্চলের চারপাশে উচ্চশক্তির ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত দুটি বিশাল বলয়, যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা আটকে থাকে। যদিও খালি চোখে এটি দেখা যায় না, তবে স্যাটেলাইটের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি এবং নভোচারীদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে এই বলয় সক্ষম। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, ১৯৬০-এর দশকের তুলনায় বর্তমানে এই অঞ্চলের বিকিরণ পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তাদের মতে, দীর্ঘসময় ধরে মানুষের তৈরি রেডিও তরঙ্গের উপস্থিতির কারণে সেখানে একটি স্থিতিশীল ও কৃত্রিম কাঠামো গড়ে উঠেছে।

 

নাসার গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, মানুষের তৈরি এই রেডিও তরঙ্গ ভ্যান অ্যালেন বেল্টের ভেতরে একটি বুদবুদসদৃশ সীমানা তৈরি করেছে। এই সীমানা উচ্চশক্তির বিকিরণ কণাগুলোকে পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে সরাসরি কোনো ‘ফোর্স ফিল্ড’ বা সুরক্ষা কবচ বলতে নারাজ হলেও, এর প্রভাব যে সুস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য তা তারা স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, মানুষের প্রযুক্তিগত কর্মকাণ্ড এখন পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর মহাকাশের পরিবেশেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে।

 

তবে মানুষের তৈরি তরঙ্গের প্রভাব ধীরগতিতে ঘটলেও, সূর্য অত্যন্ত দ্রুত মহাকাশের পরিবেশ বদলে দিতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের মে মাসে গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানে। এর ফলে মেরু অঞ্চলে যেমন চোখধাঁধানো অরোরা দেখা গিয়েছিল, তেমনি জিপিএস সংকেতও সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। নাসা জানিয়েছে, সেই সময় ভ্যান অ্যালেন বেল্টের দুটি মূল বলয়ের মাঝখানে আরও দুটি অস্থায়ী বিকিরণ বলয় তৈরি হয়েছিল, যা মহাকাশ যান চলাচলের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

ডিবিসি/এএমটি

আরও পড়ুন