যাদের শরীরে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে বিপদের সময় তাদের রক্তের প্রয়োজন পড়লে তা খুঁজে পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আত্মীয়-পরিজনদের। সাধারণত, যে সমস্ত গ্রুপের রক্ত প্রতি ১,০০০ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে থাকে, সেগুলিকে ‘বিরল’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়।
আমেরিকান রেড ক্রসের মতে, ও নেগেটিভ (O-) হল তেমনই একটি ‘বিরল’ রক্তের গ্রুপ। কিন্তু এমন একটি রক্তের গ্রুপও পৃথিবীতে রয়েছে যা প্রতি ৬০ হাজার জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এটিই হল বিশ্বের ‘বিরলতম’ গ্রুপের রক্ত। রক্তের এই গ্রুপটিকে বলা হয় ‘গোল্ডেন ব্লাড’। চিকিৎসকদের কাছে এটি ‘আরএইচ-নাল’ (Rh-Null) নামে পরিচিত।
এই ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্তের সন্ধান প্রথম পাওয়া যায় ১৯৬১ সালে। এই রক্তের আরএইচ সিস্টেমে ৬১ অ্যান্টিজেনের অস্তিত্ব ছিল না। সাধারণত, রক্তের কোষগুলোতে ৩৪২টি অ্যান্টিজেন থাকে। এই অ্যান্টিজেনগুলোর কম্বিনেশনই নির্ধারণ করে কোনও রক্তের গ্রুপ ঠিক কী হবে।
অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে মানুষের রক্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল, ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ আর ‘ও’। প্রত্যেকটি রক্তের গ্রুপ আবার দু’ভাগে বিভক্ত, ‘পজেটিভ’ এবং ‘নেগেটিভ’। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে মানুষের শরীরে মোট আটটি আলাদা আলাদা গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়। সেগুলি হল, ‘এ পজেটিভ’, ‘এ নেগেটিভ’, ‘বি পজেটিভ’, ‘বি নেগেটিভ’, ‘ও পজেটিভ’, ‘ও নেগেটিভ’, ‘এবি পজেটিভ’ ও ‘এবি নেগেটিভ’। এগুলোর বাইরেই নতুন এক গ্রুপ হলো ‘আরএইচ-নাল’।
বিগত ৫৮ বছরে বিশ্বে মাত্র ৪৩ জন মানুষের মধ্যে এই ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত বা ‘গোল্ডেন ব্লাড’-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে । এই ৪৩ জনের মধ্যে ৯ জন নিয়মিত রক্ত দান করেন। এই ধরনের রক্ত বিরল হওয়ার কারণেই এই গ্রুপটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোল্ডেন ব্লাড’।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের শরীরে ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত রয়েছে, তারা যে কোনও গ্রুপের মানুষকেই রক্ত দিতে পারেন, তবে সবার থেকে রক্ত নিতে পারেন না। তাই চিকিৎসকদের মতে, যাদের শরীরে ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত রয়েছে, তাদের খুব সাবধানে জীবনযাপন করা জরুরি।