প্রখ্যাত লেখক, চিন্তাবিদ এবং সংগঠক আহমদ ছফার আজ ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০০১ সালের এই দিনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যে ও মননশীলতার জগতে তাঁর প্রভাব আজও অম্লান। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তাঁর লেখনী শোষিত মানুষের পক্ষে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছে।
আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ষাটের দশকে তিনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য তুমি সাথি’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পাঠকমহলে সাড়া ফেলেন। তবে তাঁকে কিংবদন্তীতুল্য খ্যাতি এনে দেয় বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওঙ্কার’।
প্রবন্ধ সাহিত্যেও আহমদ ছফা ছিলেন এক স্বতন্ত্র ধারার প্রবর্তক। তাঁর রচিত ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ ও ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ প্রবন্ধগ্রন্থ দুটি বাঙালি সমাজ ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে এবং আজও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। কবিতার ভুবনেও তিনি রেখেছেন তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। ‘জল্লাদ সময়’, ‘একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’ এবং ‘লেনিন ঘুমোবে এবার’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এর পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প ও গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
আহমদ ছফার লেখার মূল উপজীব্য ছিল মুক্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের গভীরে প্রোথিত নানা অসঙ্গতি ও বৈষম্যের স্বরূপ উন্মোচন। তিনি আজীবন প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর ক্ষুরধার কলামগুলো পাঠকদের দারুণভাবে প্রভাবিত করত।
আহমদ ছফা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠানবিরোধী ব্যক্তিত্ব। এর প্রতিফলন হিসেবে তিনি ১৯৭৫ সালে লেখক শিবির পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তাঁর অসামান্য সাহিত্যকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্ম আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে।
ডিবিসি/জেআরওয়াই