জীবনে একবারও প্রেমে পড়েননি, এমন মানুষ বোধহয় খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। তাই তো বলা হয়, ‘হৃদয় আছে যার, সেই তো ভালোবাসে। প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে’।

বন্ধুত্ব থেকেও মানুষ কখন যে প্রেমে পড়ে যায়, তা টেরই পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রথম দেখাতেই  কি প্রেম হওয়া সম্ভব? 

নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানীর দাবি, প্রথম দর্শনে প্রেম আসলে একটি ভুল ধারণা। প্রেম নয়, বরং কাউকে প্রথমবার দেখার পর জাগে কাম।

কবির ভাষায়, ‘প্রেম এসেছিল নীরবে’। জীবনে কখন, কীভাবে, কার প্রেমে যে আপনি পড়বেন, তা আগে থেকে হলফ করে বলা যায় না। তবে ‘নীবর প্রেম’-এর  শিহরণ তো সকলেই অনুভব করে। আর বিষয়টি যখন প্রেম, তখন প্রথম দর্শনের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে!

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম দর্শনে প্রেম তখনই সম্ভব হয়, যখন আপনি তার বাহ্যিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন। তবে সত্যিকারের ভালোবাসা হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগই প্রথম দেখায় প্রেমে পড়াকে সত্যিকারের ভালোবাসা বলতে নারাজ। একটি জনপ্রিয় ডেটিং সংস্থার করা সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়েন।

তবে প্রথম দেখাতে কারও প্রতি অদম্য আকর্ষণকে প্রকৃত ভালোবাসা বললে নারাজ কেউ কেউ। বেশিরভাগ মানুষই জানিয়েছেন, কাউকে দেখে প্রেমে পড়ার কারণ হলো তার দৈহিক সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব কিংবা তাদের ব্যবহার ও গুণের প্রতি আকস্মিক মোহ।

প্রায় ৮১ শতাংশ মানুষ জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে একে অপরকে চেনা-জানার মাধ্যমেই প্রকৃত প্রেম গড়ে ওঠে।

কোনো মানুষের সঙ্গে আপনি কতটা একাত্মবোধ করছেন বা কতটা সময় একসঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে, এসব কিছুই ধীরে ধীরে বোঝা যায়। এরপর গড়ে ওঠে প্রকৃত ভালোবাসা। তাই প্রথম দেখাতে যে প্রেম হয়, তা ভেঙে যেতেও সময় লাগে না!

মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের সংজ্ঞানুযায়ী প্রেম হলো, 'একটি প্রবল আকর্ষণ, যা কোন যৌন-আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাউকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে এবং যাতে তা ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মনোবাসনাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এতে অপর ব্যক্তির প্রতি একইসঙ্গে শক্তিশালী মানসিক এবং যৌন আকর্ষণ কাজ করে। প্রেমের সম্পর্কে যৌনতার তুলনায় ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি অধিক গুরুত্বের অধিকারী হয়।'

গবেষণা অনুযায়ী, দুই জনের মধ্যে প্রেম করতে হলে ৪ বার দেখা করতে হবে। এই গবেষণাটি এই সত্যটিকেও অস্বীকার করেছে যে, প্রেম প্রথম দর্শনেই ঘটে। এটি একটি মিথ মাত্র।

নিউইয়র্কের হ্যামিল্টন কলেজের মনোবিজ্ঞানীরা তরুণদের একটি দল গঠন করেছিলেন। এই সময় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের একে অপরের ছবি দেখানো হয়। গবেষণা দলটি ছেলে এবং মেয়েদের মস্তিষ্ককে একটি মনিটরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, যা তাদের মনের বিভিন্ন ছবির প্রতি তাদের আকর্ষণ বিচার করতে পারে।

এই সময়, মনোবিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, ছবিগুলি প্রথমবার দেখানোর পরে, মনিটরে কিছুটা নড়াচড়া হয়েছিল। ছবিগুলো দ্বিতীয়বার দেখানোর পর আগের চেয়ে আকর্ষণের রেটিং বেড়েছে। তৃতীয়বারের মতো ছবি দেখানোর সময় রেটিং বেশি ছিল এবং বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, অংশগ্রহণকারীদের মস্তিস্কের যে অংশ উত্তেজনা ও আনন্দের জন্য দায়ী, তাদের চতুর্থবার ছবি দেখানোর সময় তা সক্রিয় হয়েছিল।