মঙ্গলবার (১৬ই ডিসেম্বর) ভোরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় গাজার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির তাবু এবং আল-শিফা হাসপাতাল প্লাবিত হয়েছে। গত সপ্তাহে একটি শীতকালীন ঝড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যুর পর নতুন করে এই দুর্যোগে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপত্যকার বাসিন্দারা।
আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৃষ্টির পানি গাজার বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের অভ্যর্থনা ও জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গত দুই বছরের ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
গত ১০ই অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও, ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়ায় তা ব্যর্থ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া প্রবল বাতাসে হাজার হাজার তাবু উড়ে গেছে এবং বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। খালেদ আবদেল আজিজ নামে এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, বাতাসের তোড়ে তাদের তাবু উপড়ে গেছে এবং সব জিনিসপত্র উড়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বসে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় তাবু ডুবে যাওয়ায় মাহা আবু জাজার নামে এক নারী তার তিন সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। অনেকেই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের নিচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার বাড়িঘর বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। এই ঘরগুলো লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত সপ্তাহে ‘স্ট্রম বাইরন’-এর আঘাতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৭,০০০ তাবু বন্যায় ভেসে গেছে বা বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেইসাথে ১৩টি ভবন ধসে পড়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, বর্তমানে গাজাজুড়ে প্রায় আড়াই লাখ পরিবার তাবু শিবিরে বসবাস করছে। যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে, ফলে মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৭০,৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১,৭১,১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ডিবিসি/এনএসএফ