গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর একটি প্রাণঘাতী হামলার পর সেখানকার বেসামরিক মানুষের জন্য নিরাপদ পানির সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত রবিবার একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় দশজন নিহত হওয়ার পর থেকে সাধারণ গাজাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের ছোড়া গোলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এই 'ভুল' এখন আল-মানাসরা পরিবারের মতো হাজারো ফিলিস্তিনি পরিবারের জন্য জীবন-মরণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজা সিটির উত্তরে একটি বিধ্বস্ত কংক্রিটের ভবনের ধ্বংসস্তূপের পাশে তাঁবুর শিবিরে বসবাস করছে আল-মানাসরা পরিবার। পরিবারের প্রধান ইব্রাহিম আল-মানাসরা বলেন, "প্রতিদিন এক জগ বিশুদ্ধ পানির জন্য আমাদের কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর যা পাই, তা দিয়ে পান করা বা রান্না করার মতো মৌলিক চাহিদা মেটানোই কঠিন, গোসল বা কাপড় ধোয়ার কথা তো ভাবাই যায় না।"
বিশুদ্ধ পানির এই তীব্র অভাবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইব্রাহিমের স্ত্রী উম আয়া জানান, তাদের ছয় সন্তানের মধ্যে চারজনই ডায়রিয়া এবং নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, "নোংরা পানি ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। বাচ্চাদের ত্বকে ঘা হয়ে যাচ্ছে, তারা সারাক্ষণ অসুস্থ থাকছে। আমরা জানি এই পানি বিপদজনক, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য এটাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন।"
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং বিশুদ্ধ পানির উৎস ধ্বংস হওয়ায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কলেরা, হেপাটাইটিস-এ এবং টাইফয়েডের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। হাসপাতালগুলো আহত রোগীতে পরিপূর্ণ থাকায় এসব রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
যে পানি বিতরণ কেন্দ্রে হামলা হয়েছিল, সেটি ছিল আশেপাশের কয়েকটি আশ্রয় শিবিরের মানুষের জন্য পানির একমাত্র উৎস। হামলার পর থেকে সেটি বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষ এখন আরও দূরের অনিরাপদ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আল-মানাসরা পরিবারের মতো অনেকেই এখন ভয় আর অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন পার করছেন, কারণ তারা জানেন না পরবর্তী পানির ক্যান সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হবে কি না।
তথ্যসূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ডিবিসি/এমইউএ