মতবিনিময় সভা 

প্রাথমিকে পড়ার দক্ষতা ও অভ্যাস উন্নয়নে সুপারিশ

ময়ূখ

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২৩শে অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৪:০৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

দেশের প্রাথমিক স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে শিক্ষাবিদেরা। বাংলা বিষয়ে পড়ার দক্ষতা ও পাঠাভ্যাস উন্নয়নে এসব সুপারিশ পথনির্দেশনা দেবে বলে আশা জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রুম টু রিড বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে শিক্ষার বিকল্প নেই। সরকার শিশুর শারিরিক ও মানসিক বিকাশে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনষ্ক করে গড়ে তুলতে গনিত অলিম্পিয়াডসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পড়তে না শিখলে পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠেনা। এক্ষত্রে রুম টু রিড বাংলাদেশ প্রশংসনীয় কাজ করছে।

স্বাগত বক্তব্যে রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার, মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নে শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ও শিশুবান্ধব পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জানান, শিশুদের দক্ষ ও স্বাধীন পাঠক হিসাবে গড়ে তুলতে রুম টু রিড বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাথমিক স্তরে বাংলা বিষয়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রমে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এর মধ্য দিয়ে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে চলমান কর্মসূচি ত্বরান্বিত করবে বলেও আশা জানান রাখী সরকার।

‘মানসন্মত শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরে বাংলা বিষয়ে পড়ার দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস উন্নয়ন' শীর্ষক প্রতিবেদন তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শ্যামলী আকবর। রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ওঠা শিক্ষার্থীরা বুঝে উচ্চারণ করে মিনিটে ৩৩টির বেশি শব্দ পড়তে পারে না। যদিও এর আন্তর্জাতিক হার মিনিটে ৪৫ থেকে ৬০টি শব্দ। এমনকি তৃতীয় শ্রেণির শতকরা ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থী বাংলা পঠনে কাঙ্খিত মান অর্জন করেনি। তিনি সুপারিশ করেন, পাঠের বিষয় আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করতে হবে। পরিচিত পরিবেশের শব্দ ও বিষয় রাখতে হবে। বাহুল্য তথ্য ও বড় পরিসরের অনুচ্ছেদ বর্জন করতে হবে। যুক্তবর্ণ শুদ্ধ উচ্চারণে ক্রম অনুসারে অনুশীলন করতে হবে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে যুক্তবর্ণ ও ফলার ব্যবহার যথাসম্ভব কম রাখতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বর্ণ শব্দ ও বাক্যের পুনরাবৃত্তি হবে এবং তা শ্রেণির ক্রমানুসারে কমতে থাকবে।

সভার সভাপতি ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান অর্জন এবং পঠন দক্ষতাসহ পাঠাভ্যাস বাড়ানোয় জোর দেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, গবেষণাসহ নানা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। মতবিনিময় সভার এসব সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

রুম টু রিড বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরেন সংস্থাটির সাক্ষরতা কর্মসূচি বিভাগের পরিচালক জনাব জিল্লুর রহমান সিদ্দিকি। তিনি জানান,  ঢাকা, নাটোর ও কক্সবাজারের ৫৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন, শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ প্রকাশনা ও সরবরাহের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে শিশুদের পঠন দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস তৈরিতে কাজ করছে রুম টু রিড। সাক্ষরতা কর্মসূচির আওতায় দেশে ইতিমধ্যে সহস্রাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ শিশুর সাথে সরাসরি কাজ করেছে।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক শাহ আলম। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন এনসিটিবি'র প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আরিফুল হক কবির,  রুম টু রিড-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের লিটারেসি বিভাগের ম্যানেজার মাজহার করিম।

আরও পড়ুন