ফারাক্কা বাঁধের ৫০ বছর পূর্ণ হলো আর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির ৩০ বছর শেষ হচ্ছে আগামী বছর। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ হাজার কিউসেক পানি না পাওয়ায় মৃতপ্রায় রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মা নদী। পাঁচ দশকে শুকিয়ে মরে গেছে অন্তত ২৫টি শাখা নদী। ধ্বংস হয়েছে নৌপথ, চাষাবাদে পড়েছে বড় প্রভাব, নষ্ট হয়েছে জীববৈচিত্র্য।
হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানাকোসা দিয়ে। এরপর গোয়ালন্দ হয়ে পদ্মা নদী ১২০ কিলোমিটার দূরে মিলিত হয়েছে চাঁদপুরে মেঘনায়। নদীটি পুরো অঞ্চলের কৃষি ও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম নিয়ামক। গবেষকরা বলছেন, উজানের ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ বসিয়ে, ভারত ভাগীরথী নদীতে পানি প্রত্যাহার করায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে পদ্মাসহ এর অসংখ্য শাখা নদীতে।
চারঘাটে পদ্মা থেকে উৎপন্ন, একসময়ে খরস্রোতা বড়াল নদী এখন নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায়। একইভাবে মহানন্দা, পাগলা, পুনর্ভবা, গড়াই, ইছামতী, কালীগঙ্গা, চিত্রাসহ বহু শাখা নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকিতে। উৎসমুখে পানি না পেয়ে ২৫টি নদী অস্তিত্ব হারিয়েছে। আর এর প্রভাব বেশি পড়েছে কৃষি ও নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্রে। চাষাবাদের জন্য নির্ভরতা বেড়েছে ভূগর্ভস্থ পানি ওপর। হারিয়ে গেছে দুই হাজার কিলোমিটার নদীপথ। আবাস ও প্রজননস্থল হারিয়ে অনেক প্রজাতির মাছও এখন বিলুপ্তির পথে।
৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের শীতলতার মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলেও আশাবাদী গবেষকরা। তবে কাগুজে চুক্তি নয়, বাস্তবে পানি সরবরাহের স্বচ্ছ পরিসংখ্যান চান তাঁরা। চুক্তি নবায়ন না হলে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি গ্রহণের পরামর্শ গবেষকদের। স্প্রিঙ্গার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ১৯৭৪ সালে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে পানির প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ ঘনমিটার। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৬ ঘনমিটার।
ডিবিসি/রাসেল