জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই ফুলের জন্য অপেক্ষা, আর তারপর মাত্র সাত দিনের মাথায় মৃত্যু। শুনতে অবাক লাগলেও প্রকৃতির বুকে এমন ধৈর্যশীল গাছের অস্তিত্ব রয়েছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউই দ্বীপের আগ্নেয়গিরি হ্যালেকালার ঢালে এই বিরল গাছের দেখা মেলে, যার নাম হ্যালেকালা সিলভারসোর্ড (Haleakalā silversword)।
এই গাছ তার জীবনে মাত্র একবারই ফুল ফোটানোর জন্য ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এই দীর্ঘ সময় ধরে রুপালি, তরবারির মতো পাতার মাধ্যমে সূর্যের আলো শোষণ করে শক্তি সঞ্চয় করে। অবশেষে যখন ফুল ফোটার সময় আসে, তখন গাছটি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে একটি লম্বা ডাঁটা তৈরি করে, যা বেগুনি বা লালচে রঙের কয়েকশ ফুলে ঢেকে যায়।
জীবনের এই একমাত্র প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্য গাছটি তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করে ফেলে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। পরাগায়নের পর বাতাসে বীজ ছড়িয়ে দিয়েই গাছটির জীবনচক্র শেষ হয়ে যায় এবং সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় একে মনোকর্পিক (monocarpic) উদ্ভিদ বলা হয়।
হ্যালেকালা সিলভারসোর্ডের জীবনচক্র আরও বিস্ময়কর কারণ এটি অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে জন্মায়। হ্যালেকালার শুষ্ক, তীব্র বাতাস এবং অক্সিজেনের স্বল্পতার মতো কঠিন আলপাইন মরুভূমির পরিবেশে এটি বেঁচে থাকে। মানুষের হস্তক্ষেপ এবং পশুদের বিচরণের কারণে অতীতে এই গাছের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে হ্যালেকালা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষণের মাধ্যমে এই প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এই গাছটি শুধুমাত্র একটি উদ্ভিদই নয়, এটি ধৈর্য, সঠিক সময় এবং প্রকৃতির দীর্ঘস্থায়ী সৌন্দর্যের এক দারুণ উদাহরণ।
তথ্যসূত্র এনপিএস।
ডিবিসি/এমইউএ