বিবিধ, জেলার সংবাদ

ফেনীতে জলাবদ্ধতা ও বন্যা মোকাবেলায় ব্যর্থতায় বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ ও উদ্বেগ

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১০ই জুলাই ২০২৫ ০৮:০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

গত বছরের প্রলয়ঙ্করী বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই আবারও কৃত্রিম বন্যা ও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে ফেনী শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে জেলার কয়েকটি নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন। লাগাতার বৃষ্টি এবং কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাকে এই জনদুর্ভোগের জন্য দায়ী করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৯ই জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেছেন নাগরিক সংগঠন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সল, ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনী-উসাফের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম নুরুল আবসার ও সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন রাসেল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর পক্ষে অধ্যাপক মোশাররফ হোসাইন, ফেনী সদর এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব ফেনীর সাধারণ সম্পাদক শরিফুর রহমান আদিল এবং ফেনী জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও সভাপতি শরিফুল ইসলাম শ্রাবণ।

 

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, "আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের প্রিয় ফেনী জেলা শহর কার্যত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ধরনের বৃষ্টি মৌসুমে স্বাভাবিক বিষয় হলেও, নগর ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম বেহাল দশা শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে।"

 

তারা আরও উল্লেখ করেন, পথঘাট, ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে এবং শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। নেতৃবৃন্দের মতে, এই পরিস্থিতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বেশি, এটি "বছরের পর বছর অপরিকল্পিত ড্রেনেজ, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর অবহেলার ফল।"

 

বিবৃতিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি তীব্র অভিযোগ এনে বলা হয়, এক বছর আগে ভয়াবহ বন্যায় ফেনীসহ ১১টি জেলার হাজার কোটি টাকার সম্পদহানি হলেও মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলের জন্য দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, "অজানা কারণে বিগত প্রায় দেড়যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার ফেনীবাসীকে বন্যা থেকে স্থায়ী সুরক্ষা দিতে পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে বারবার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে তাগাদা দেয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেনি।" এর ফলে এবারও ভারত থেকে আসা পানিতে পরশুরাম ও ফুলগাজীর মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

 

নেতারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, বিএসএফ কর্তৃক বল্লামুখা বাঁধ কেটে দেওয়ার এক বছর পরও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তা পুনর্নির্মাণ করতে পারেনি, যার ফলে বর্ষার শুরুতে ভারতীয় পানিতে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিরা প্লাবিত হয়েছেন। তারা মনে করেন, "পানি সম্পদ উপদেষ্টাও এর দায় এড়াতে পারেন না।"

 

এই পরিস্থিতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ফেনী জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে:
১. অবিলম্বে বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণ করে স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে।
২. মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বাঁধ ও পানি নিষ্কাশন কার্যক্রমের দুর্নীতি তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহরের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৬. নগর উন্নয়নের নামে যত্রতত্র নির্মাণকাজ ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।
৭. জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রশাসনিক তদারকি জোরদার করতে হবে।

নেতারা ফেনীর সকল নাগরিককে নিয়ম মেনে চলার এবং পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একইসাথে, তারা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, "সময়ের কাজ সময়ে না করলে এমন জনদুর্ভোগের দায় কেউ এড়াতে পারে না। জনমতকে উপেক্ষা করে সমস্যার সমাধান হবে না।"

 

বিবৃতিতে তারা ফেনীর মানুষের পাশে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

 

ডিবিসি/এএনটি

আরও পড়ুন